ছোট্ট একটি টিনের ঘরের কারনে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডের একমাত্র পর্যটন কেন্দ্রটি। যে ছোট্ট ঘরটি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এটি কোন কাজে ব্যবহার না করা হলেও সেটি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এতে করে ত্রিনদী মোহনার দেখার একমাত্র স্থানটির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বিনোদনপ্রেমীরা।
চাঁদপুরের পদ্ম, মেঘনা, ডাকাতিয়াসহ তিনটি নদীর মিলনাস্থল, তিন নদীর মোহনার বড় স্টেশন মোলহেড (স্থানীয় ভাষায় ঠোডা) চাঁদপুর বাসির জন্য একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে দর্শনার্থীদের সুবিদার জন্য চাঁদপুর পৌরসভা কর্তপক্ষ মোলহেডের চারপাশে বসার জন্য পাকা আসন নির্মাণ করেন। প্রশাসনের আরো কিছু উদ্যোগে এতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ, পবিত্র ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, ভ্যালেন্টাইন ডে, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বের, ২৬ শে মার্চসহ বিভিন্ন উৎসবে দর্শনার্থীদের প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এই পর্যটন কেন্দ্রে চাঁদপুর জেলার বাইরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষাসফরে আসে। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক পর্যটনপ্রেমীরা এখানে ঘুরতে আসেন বনভোজনের আয়োজন করেন।
স্থানীয় কয়েকজন বয়স্ক বাসিন্দার সাথে আলাপকালে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদাররা সেখানে মুক্তিযোদ্ধা নারী পুরুষদের কে হত্যা করে মালবাহী ট্রেনের বগিতে ঢুকিয়ে তালা আটকে নদীর মধ্যে ফেলে দিতেন। আর তাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই গত ৩/৪ বছর পূর্বে চাঁদপুর পৌরসভার অর্থায়নে ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং তার সৌন্দর্য বর্ধনে রক্তধারা নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়।
সর্বশেষ চাঁদপুরকে ব্র্যান্ডিং হিসেবে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর নামকরণের পর মোলহেডকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় জেলা প্রশাসনের ব্র্যান্ডিং বিভাগ। সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলের উদ্যোগে ইলিশ সেলফি জন তৈরি করা হয়। এসব নিয়ে এ স্থানটির সৌন্দর্য প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে আসছে।
কিন্তু রক্তধারার পাশেই চাঁদপুর বন বিভাগের ছোট্ট একটি টিনের ঘরের কারণে যার সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে এ ঘুরতে আসা আব্দুস সালাম, মরিয়ম বেগম, জুনায়েদ হোসেন, তপন, দেলোয়ার সহ বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, বন বিভাগের এই ছোট্ট টিনেরর ঘরের কারণে মোলহেডের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটি এখানে থেকে সরিয়ে ফেলা হলে পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে যাবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ টিনের ঘরটি এভাবে পড়ে থাকায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে সেখানে ঘুরতে আসা অনেক যুবক-যুবতী ঘরটির আবডালে বসে অসামাজিক কর্মকাণ্ড করে থাকে।
চাঁদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ন পর্যটন কেন্দ্রটির সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্য বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ এ টিনের ঘরটি সরিয়ে নিলে এর সুশ্রী আরো বেশি বৃদ্ধি পেতো।
চাঁদপুর পৌর কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াস চাঁদপুর টাইমসকে জানান, প্রায় ২০ বছর আগে বড় স্টেশন মোলহেডের এই ঘরটিতে বসে চাঁদপুর বন বিভাগের কার্যক্রম চলতো। ২০ বছে আগে যখন নৌপথে অবৈধ ভাবে কোন গাছ নিয়ে যাওয়া হতো, তখন বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেখান থেকে সেগুলো ধরে এই ঘরে বসে তাদের কাজ করতেন। কিন্তু এই ঘরটি প্রায় ২০/২৫ বছর যাবত এভাবে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় বিনোদন
এ কাউন্সিলর আরো জানান, পরিত্যক্ত এ ঘরের কারণে পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি পৌরসভার দায়িত্বে থাকলে আমরা মেয়র সাথে আলাপ করে এটি সরিয়ে ফেলতাম। এখন কর্তৃপক্ষ যদি ঘরটি সরিয়ে ফেলে, আমরা পৌরসভা থেকে আরো কিছু নতুন করে বসার আসন নির্মাণ করে দিবো। এছাড়া আসন যেগুলো ভেঙ্গে গেছে সেগুলোও মেরামত করবো।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌর মেয়র আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এটি হচ্ছে চাঁদপুর বন বিভাগের ঘর। তারা যদি ঘরটি সরিয়ে নেয়, তাহলে মোলহেডের অনেকটা সৌন্দর্য ফিরে আসবে। তারপরও যেহেতু এই ঘরটির কারণে বিনোদন কেন্দ্রের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আমরা বন বিভাগ ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করে এই ঘরটি সরানোর ব্যবস্থা করবো তাহলে মোলহেডের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।’
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
১৩ মার্চ, ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur