Home / চাঁদপুর / বৈদেশিক কর্মসস্থানে ৭ম জেলা চাঁদপুর হলেও সুবিধা বঞ্চিত প্রবাসীরা
Chandpur Finger Print office
Chandpur Finger Print office

বৈদেশিক কর্মসস্থানে ৭ম জেলা চাঁদপুর হলেও সুবিধা বঞ্চিত প্রবাসীরা

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্যে ছুটে যাওয়া চাঁদপুর দেশের ৪২ টি জেলার মধ্যে ৭ম হলেও প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার ৩ লাখ ২৯ হাজার বৈধ কর্মজীবী প্রবাসে রয়েছেন।

২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যা ছিলো ৩ লাখ ৮ হাজার ৬শ’ ৭৭জন। ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত নতুনভাবে বিদেম গমন করেছে ১৬,৫৬১ জন। জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত কেবলমাত্র সোনালী, অগ্রণী,জনতা ও কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব প্রবাসীরা ১ হাজার ১শ’ ৭২ কোটি টাকা র‌্যামিটেন্স পাঠিয়েছেন।

চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) চাঁদপুর টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে এ তালিকায় জেলার অন্যান্য ব্যাংক, বি-ক্যাশ, হুন্ডির তথ্য জানা যায়নি। তবে ওইসব তথ্য যুক্ত হলে বছরে ২ হাজার কোটি টাকা র‌্যামিটেন্স ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেছেন চাঁদপুরের একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা।

চাঁদপুরের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় , চাঁদপুরে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে শুরু হয় বিদেশগামীদের জন্যে আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রম। ফলে চাঁদপুর থেকে বিদেশে যাওয়ার প্রত্যাশীরা এখন বিনা পয়সায় চাঁদপুরেই ফিঙ্গার প্রিন্ট ও অন্যান্য ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর হতে ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ৮ হাজার ১শ’ ৯১ জন, জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৮শ ৪০ জন এবং জানুয়ারি ২০ পর্যন্ত ১ হাজার ৫শ’ ১৯ জন বিদেশ গমনেচ্ছুককে আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া হয়েছে। কেবলমাত্র ভিসা প্রাপ্তদেরকেই আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয় ।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রবাসীর দিক থেকে চাঁদপুরের মধ্যে ফরিদগঞ্জ জেলা শীর্ষস্থানে রয়েছে, এ উপজেলার বেশিরভাগ প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। এ উপজেলায় বৈধ প্রবাসীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ১শ’ ৮৪ জন।

২য় অবস্থানে রয়েছে হাজীগঞ্জ। এ উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা ৬১ হাজার ২শ’ ২৯ জন, ৩য় শাহরাস্তি ও প্রবাসীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ২শ’ ১৯ জন, ৪র্থ অবস্থানে কচুয়া, এ উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা ৪২ হাজার ২২ জন, ৫ম অবস্থানে মতলব উত্তর, এ উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৪শ’ ৮৭ জন, ৬ষ্ঠ অবস্থানে চাঁদপুর সদর, এ উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৪২৫ জন, ৭ম অবস্থানে মতলব দক্ষিণ, এ উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৪৪১ জন এবং ৮ম অবস্থানে জেলার সর্বাধিক উপজেলা হাইমচর, এ উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা ৮ হাজার ৩শ’ ৩১ জন ।

এর অবৈধ অনেক প্রবাসী রয়েছেন, তারা সাধারণত হুন্ডির মাধ্যমে তাদের স্বজনদেরকে টাকা পাঠান। এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি।

Fingerprint

চাঁদপুর কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো.ফখরুল আলম চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সকল সেক্টরের সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এটিও একটি কার্যক্রম। এখন আর সময় ও অর্থ ব্যয় এবং অযথা হয়রানি বন্ধে ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রম চাঁদপুরেই ২০১৭ সালের সেপ্টেমর থেকে শুরু হয়েছে। এখন থেকে ঢাকায় ও কুমিল্লায় গিয়ে অযথা অর্থ ব্যয় ও সময় নষ্ট করতে হবে না। বিভিন্ন দেশে গমনেচ্ছুকদের পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপির সঙ্গে নির্ধারিত ট্রেজারী চালান জমা দিলে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে পারবে। এর ঐ বিদেশ গমনেচ্ছুক ৩ দিনের একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। ’

অপর একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ কাজের ভিসা পাওয়ার পর তার ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ করা হয়। তবে চাঁদপুর জেলায় প্রবাসীদের ডাটা সম্মলিত স্মার্ট কার্ড প্রসেসেসিং করার ব্যবস্থা ও ট্রাভেল এজেন্সি না থাকায় বিদেশ গমনেচ্ছুকদের হয়রানি কমছে না।’

এদিকে চাঁদপুর কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে দৈনিক গড়ে ১৫০ থেকে ১৭০ জনের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ডাটা এন্টি করা হচ্ছে। কোনো বিদেশগামী কর্মী পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি সঙ্গে এনে প্রবাসী কল্যাণ বা সোনালী ব্যাংকের ২শ’ টাকার ট্রেজারি চালান কপি হাতে করে আনলেই পর্যায়ক্রমে ফিঙ্গার ইমগ্রেশান গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় ডাটা এন্ট্রি করা হয়। এর বাইরে রয়েছে তাদের ৩ দিনের প্রশিক্ষণ। এটি প্রবাসীদের অনেকটা উপকারে আসে।

প্রয়োজনীয় আরো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় চাঁদপুরের বিভিন্ন দেশে গমনেচ্ছুকদের হয়রানী কমছে না। অথচ দেশের প্রাবাসীদের বিষয়ে অনগ্রসর অন্যান্য জেলায় প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যা চাঁদপুরে নেই ।

এছাড়াও ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া দেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো হিসেবে কাজ করে আসছে। দেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও প্রবাসীদের জন্যে ব্যাংক গঠন হলেও এর অধিদপ্তর নেই। ৬৪ জেলার মধ্যে ৪২ টি জেলায় এর কার্যক্রম চলছে।

কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগের মতে ফ্রি ভিসা বলে কোনো ভিসা নেই। প্রকৃতপক্ষে ফ্রি ভিসা একটি বিভ্রান্তমূলক প্রচারণা। তথাকথিত ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবসহ মধ্রপ্রাচ্যে গিয়ে নিজে নিজে কাজ যোগাড় করা অসম্ভব। চাকুরির নিশ্চয়তা ব্যতিত ফ্রি ভিসার নামে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি কোনো কর্মীকে প্রেরণ করলে তার বিরুদ্ধে ‘ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ৩১ ধারা’ মতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ ব্যাপারে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর একটি বিজ্ঞপ্তিও রয়েছে।

প্রতিবেদক : আবদুল গনি
২২ জানুয়ারি , ২০১৯

Leave a Reply