Home / চাঁদপুর / যেভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে চলছেন চাঁদপুরের রাসেল
যেভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে চলছেন চাঁদপুরের রাসেল

যেভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে চলছেন চাঁদপুরের রাসেল

দু’টি পা-ই তার অকেজো। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে করেন না। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি পৌঁছেছেন অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

শত বাধা-বিপত্তি আর সমাজের কটু কথাকে প্রাধান্য না দিয়ে আপন মহিমায় জীবনকে সাজিয়ে তুলেছেন। পাশাপাশি আরেক যুবকেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা যুবক মো. ইকবাল হোসেন রাসেল। তার সংগ্রামী জীবনের গল্প শুনেছেন রিফাত কান্তি সেন-

ছোটবেলা থেকেই যুদ্ধ:

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রূপসা এলাকার রাসেল জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী ছিলেন না। চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই জীবন যুদ্ধ শুরু। অজানা এক রোগের কবলে পড়ে হঠাৎ দু’পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলেন। ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগের। তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা অতটা আধুনিক ছিল না।

লেখাপড়ায় হাতেখড়ি:

পা হারিয়ে বিপাকে পড়া রাসেলকে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি দেন তার বাবা মাওলানা আবদুস সত্তার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অতটা না পেলেও জীবনে চলার পথের শিক্ষা পুরোটাই দিয়ে গেছেন তার বাবা। প্রাথমিকে ভর্তি হলেও স্কুলে তেমন যাওয়া হয়নি তার। প্রতিবন্ধীদের জন্য তখন লেখাপড়ার তেমন ব্যবস্থাও ছিল না। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবন্ধকতাকে জয়:

পা হারালেও জীবনযুদ্ধে ঠিকই জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে চলেছেন। সমাজের শত তিরস্কার আর পঙ্গুত্বের অভিশাপকে দূরে ঠেলে নিজের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। প্রথম প্রথম সমাজের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারলেও বর্তমানে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। নিজেকে এখন আর তিনি দোষ দেন না। ভাগ্যকে মেনে নিয়েই জীবনে চালিয়ে নিচ্ছেন।

যেভাবে ব্যবসায়ে এলেন:

রাসেলের বাবা বাড়ির পাশেই ছোট্ট একটি দোকান করে দেন। বাজার থেকে চিপস, চকলেটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করতে দেন। পরে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রুপসা বাজারে দোকান ভাড়া করে দেন। এর কিছুদিন পরই বাবা মারা যান। এরপরও তিনি ঘুরে দাঁড়ান।

ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে দোকানে ফ্লেক্সিলোড থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া দোকানে রয়েছে খাতা-কলমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মনোহরি জিনিসপত্র।

পরিবারের ভালোবাসা:

তিন ভাই-এক বোনের সংসারে রাসেল সবার ছোট। বিয়ে করেছেন। রয়েছে একটি কন্যাশিশু। বাবা-মার আদরের সন্তান তিনি। আত্মীয়, পরিবার-পরিজনসহ সবার কাছে পেয়েছেন ভালোবাসা। মাঝে মাঝে কেউ আবার হীন চোখেও দেখেছে। কিন্তু কোন কিছুকেই পাত্তা দেননি তিনি। ছুটে চলেছেন আপন মহিমায়।

চলাফেরায় যন্ত্রণা:

সকাল দশটায় দোকানে আসেন হুইল চেয়ারে করে। একা একা নেমে পড়েন চেয়ার থেকে। এরপর হাতের সম্বল হিসাবে থাকে দুটি পিঁড়ি। কোনরকমে পিঁড়ির ওপর ভর করে ওঠেন মূল দোকানে। মাঝে মাঝে দোকানে উঠতে পড়ে গিয়ে ব্যথাও পেয়েছেন।

প্রতিবন্ধীদের জন্য:

প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে থাকাটা যে কত কষ্টের, তিনি তা হারে হারে বুঝতে পেরেছেন। যদিও প্রবল মনবলের কারণে সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন। কিন্তু আসলেই প্রতিবন্ধীরা যে কত কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন, তা তিনি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন। তাই তিনি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে চান। (জাগো নিউজ)

বার্তা কক্ষ
০১ ডিসেম্বর,২০১৮

Leave a Reply