বয়স ভিত্তিক বাদে জাতীয় পর্যায়ের সকল ক্রিকেটাররা আজ থেকে ক্রিকেটারদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছে। কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন ছিলো ধর্মঘটে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। সেই গুঞ্জন আজ বাস্তবে পরিণত হলো।
এই দাবি-দাওয়ার মধ্যে আপাতত অনুর্ধ-১৯ দলসহ বাকি এইজ লেবেল দলগুলো পড়বে না। বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রিকেটাররা আজ এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সামনে দাবিগুলো তুলে ধরে।
ক্রিকেটাররা একে একে দাবিগুলো তুলে ধরে। প্রথম দাবিটি তুলে ধরেন ক্রিকেটার নাইম ইসলাম। তিনি বলেন ক্রিকেটারদের বিভিন্ন সার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য তাদের যে সংগঠনটি রয়েছে সেটি হচ্ছে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
এই সংগঠনটি বিগত সময়ে ক্রিকেটারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ক্রিকেটারদের পাশে তেমনভাবে দাঁড়ায় নি।তাই ক্রিকেটারদের দাবি এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট কে হবে আর সেক্রেটারী কে হবে সেটি ক্রিকেটাররাই পছন্দ করবে বা নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে।নাইম ইসলাম বলেন আমরা যারা ক্রিকেট খেলি তাদেরকে সবার আগে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে হবে।
এরপর কথা বলেন ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ্ রিয়াদ।রিয়াদ বলেন প্রিমিয়ার লিগের ওডিয়াই ফরম্যাটে ক্রিকেটার মানদন্ড বেধেঁ দেয়া হয়।আমরা চাই এই অবস্থার পরিবর্তন হোক।ক্রিকেটারদের মানদন্ড যদি বেধেঁ দেয়া হয় তাহলে ক্রিকেটাররা তাদের ন্যায্য পাওনাটুকু বুঝে পান না।
মাহমুদুল্লাহ্ রিয়াদ বলেন আমরা প্রিমিয়ার লিগের ক্ষেত্রে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই। বর্তমানে যে অবস্থায় খেলা হয় সকল ক্রিকেটাররা অসন্তুষ্ট। বর্তমান অবস্থায় ক্রিকেটাররা তাদের দলগুলোর মালিকদের সাথে দরদাম করতে পারে না। ক্রিকেট বোর্ড নির্দিষ্ট করে দেয় কার দাম কত হবে বা কে কোন ক্যাটাগরিতে থাকবে।
প্রসঙ্গত, ক্রিকেটবোর্ড ক্রিকেটারদের এ,বি এবং সি এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দিয়ে সম্মানি নির্দিষ্ট করে দেয়।এতে করে ক্রিকেটাররা তাদরকে বঞ্চিত মনে করছে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে।ক্রিকেটাররা এতে করে একটা লিমিটিশনের মধ্যে আটকে যায়।লিমিটিশনের মধ্যে আটকিয়ে না রেখে উন্মুক্ত করে দিলে ক্রিকেটারদের জন্য ভালো হয়।মোটকথা,প্রিমিয়ার লিগের পদ্ধতি পুণরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
এরপর ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম বলেন বিপিএলে লোকাল অর্থাৎ,দেশি খেলোয়ারদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দিতে হবে। পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে কোন খেলোয়ার কোন গ্রেডে থাকবে সেটি ঐই খেলোয়াড়ই নিজে পছন্দ করবেন। এতে করে কোন ফ্রাঞ্চাইজ দল যদি ঐই খেলোয়ারকে দলে নাও নেয় এতে করে কোন সমস্যা নেই।
সাকিব আল হাসান কথা বলেন দেশের প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট প্রসঙ্গে। তিনি বলেন প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের বেতন ৫০% বাড়াতে হবে। কমপক্ষে ১০০০০০ টাকা করতে হবে।
সাকিব বলেন প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে বেতন অনেক কম। সাকিব আরও বলেন প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে বোর্ড যে ফিটনেস লেভেলের মানদন্ড করে দিয়েছে এতে করে খেলোয়ারদের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
যেমনঃসারা বছর প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটের দলগুলোর কোচিং স্টাফ, ফিজিও রাখতে হবে। সুযোগ-সুবিধাগুলো ঢাকা কেন্দ্রিক না রেখে বিভাগিয় শহরগুলোতে দিতে হবে।কারণ প্রতিটি খেলোয়ারের ফিটনেস রিকভারির জন্য জিম, সুইমিং পুল এর দরকার। তাই প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে ভালো মানের হোটেল এর ব্যবস্থা করতে হবে। হোটেল থেকে মাঠে যাওয়ার জন্য নূন্যতম এসি বা ভালো মানের বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে যাতায়াতের জন্য বর্তমানে প্রতি খোলোয়ারকে দেয়া হয় ২৫০০ টাকা। এর পরিবর্তে বিমানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাকিব বলেন প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে আমরা যে বল দিয়ে খেলি সেটির মান উন্নত করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে এতে করে আমাদের খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়।আমরা জানি প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে এই বিষয়গুলো রাতারাতি করা সম্ভব নয়। তাই আগামি মওসুম থেকে এটি করার দাবি জানাচ্ছি। একজন খেলোয়াড়কে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয় কিন্তু ডেইলি এলাউন্স হিসেবে প্রত্যেককে দেয়া হয় মাত্র ১৫০০ টাকা যা খুবই বেমানান। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে যে ফিটনেস লেভেল চাওয়া হয়েছে এর সাথে ডেইলি এলাউন্স বিবেচনা করতে হবে।
এরপর কথা বলেন তামিম ইকবাল। তিনি বলেন সব ক্ষেত্রেই দেশিদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে।এই যেমন দেশি কোচদের বেতন কাঠামো বিদেশি কোচদের তুলনায় খুবই কম। দেখা যায় যে, একজন কোচ কোন একটা টুর্নামেন্টে ভালো করছে কিন্তু এর পরের টুর্নামেন্টে আবার তাকে রাখা হচ্ছে না।
দেশের গ্রাউন্ড স্টাফদের মূল্যায়ন করতে হবে। একজন গ্রাউন্ডস্টাফ যারা মাঠে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কিন্তু মাস শেষে তারা পাঁচ হাজার বা এরকম বেতন পান। তামিম বলেন এটিই সঠিক সময় যে আমাদের দেশি কোচ, খেলোয়াড়, আম্পায়ারদের মূল্যায়ন করতে হবে।
এরপর একে একে কথা বলেন ক্রিকেটার এনামুল বিজয়, এনামুল জুনিয়র, নুরুল হাসান সোহান এবং জুনায়েদ সিদ্দিকি।
তারা বলেন আমাদের বিপিএল ছাড়া টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট আর হয় না। আরও একটি টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট করতে হবে।জাতীয় দলের চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে।এটি বাড়িয়ে ৩০ জন করতে হবে।বিগত বিপিএলের টাকা খেলায়াড়েরা সবাই ঠিকভাবে সম্পূর্ণ টাকা এখনও পায়নি বারবার ক্রিকেট বোর্ডকে জানানোর পরও। যেটি খেলোয়াড়েরদের জন্য খুবই অস্বস্থিকর ব্যাপার।
সবশেষে সাকিব আল হাসান বলেন মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের যদি কোন দাবি-দাওয়া থাকে তারা আমাদের সাথে যোগদান করতে পারে। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাবো। সাকিব বলেন যতদিন আমাদের এ দাবি মানা না হবে সকল পর্যায়ের ক্রিকেট থেকে আমরা ততদিন বিরত থাকবো।
প্রতিবেদন : ইমতিয়াজ আহমেদ, ২১ অক্টোবর ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur