রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত চাঁদপুরের ৩ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) স্ব স্ব এলাকায় জানাযা শেষে তাদের দাফন করা হয়।
তাঁরা হলেন- জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি ইউনিয়নের শ্রীকালিয়া গ্রামের মুন্সি বাড়ির মকবুল আহমেদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমাল, মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাও ইউনিয়নের নাগদা গ্রামের বেনু প্রাধানিয়ার ছেলে রেজাউল করিম রাজু ও কচুয়া উপজেলার ৩নং বিতারা ইউনিয়নের বাইছাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আতাউর রহমান চঞ্চল।
এর মধ্যে তমালকে ডেমরার সারুলিয়ায়, রেজাউল করিমকে চট্টগ্রামে ও আতাউর রহমানকে চাঁদপুরের কচুয়ায় দাফন করা হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের শ্রীকালিয়া গ্রামের আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমাল ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃহস্পতিবার আগুনে দগ্ধ হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বন্ধু মিনহাজ উদ্দিন।
মিনহাজ আরও জানান, তমাল ঢাবির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। ব্যাচ ২০০৬-০৭। পাস করেছে ২০১১ সালে। তিনি ই ইউ আর বিডি সলিউশন-এ সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। আগুনে তার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে।
তমালের চাচাতে ভাই ফরিদগঞ্জের শ্রীকালিয়া গ্রামের সালাহউদ্দিন জানান, তমালের পরিবার ঢাকায় বসবাস করেন। তার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে তমাল দ্বিতীয়। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
গুপ্টি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গনি পাটওয়ারী বলেন, তমালের মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে আসবে না। তার মরদেহ ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় বিকেল ৩টার দিকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত মতলব দক্ষিণ উপজেলার নাগদা গ্রামের রেজাউল করিম রাজু ওই ভবনের ৫ম তলার আসিফ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। ওই ভবনের ৫তলার পুরো ফ্লোর তিনি কিনে নিয়ে ব্যবসা করতেন। রাজু ১ ভাই ৩ বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। রাজু স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তান নিয়ে বনানীতে থাকতেন। বাবা বেনু প্রধানীয়া চট্রগ্রামের একজন ব্যবসায়ী।
রাজুর চাচা শশুরের ছেলে ট্রাভেল্স ব্যবসায়ী হাজী জসিম উদ্দিন বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে আমরা তার মৃতদেহ সনাক্ত করে গ্রহণ করেছি।
খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার রানু বেগম বলেন, রেজাউল করিম রাজুর বাড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ নাগদা গ্রামের প্রধানীয়া বাড়ি। তবে তারা সবাই চট্টগ্রামে থাকেন। লাশ সনাক্ত হওয়ার পর তার মরদেহ চট্টগ্রামে নিয়ে জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আতাউর রহমান চঞ্চলের মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুময়া কচুয়ার ৩নং বিতারা ইউনিয়নের বাইছাড়া গ্রামে জানাজা শেষে তাকে মুন্সি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহত চঞ্চল বাইছাড়া গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে। নিহত আতাউর রহমানের এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন উপজেলার ৩নং বিতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইসহাক সিকদার।
নিহতের চাচাতো ভাই দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান মুন্সী নূরুল আলম বেলাল বলেন, আমার ভাই মো. আতাউর রহমান চঞ্চল দীর্ঘদিন মোহাম্মদপুরে বসবাস ও মতিঝিলে ট্রাভেল এজেন্সির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিল।
কিন্তু অল্প কয়েকদিন আগে সে বনানীতে অফিস স্থানান্তর করে। ঘটনার সময় চঞ্চল শেষ বারের মতো তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইফরানুর রহমানকে ফোন করে বলে আমি ছাদে। কিন্তু পরবর্তীতে তার ছেলেসহ অন্যান্যরা ঘটনাস্থলের কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
পরে রাত ৩টার দিকে সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে তার লাশ সনাক্ত করে শুক্রবার বাড়িতে আনা হয়। জুমার নামাজের পর জানাযা শেষে নিহতের লাশ পারিবারিক করস্থানে দাফন করা হয়। স্ত্রী তাসলিমা বেগম শিউলী একজন গৃহিনী। ছেলে এরফানুর রহমান (তাজিন) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেয়ে উপমা আক্তার।
কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বারেক প্রধান বলেন, শুক্রবার আতাউর রহমানের মরদেহ এলাকায় আনার পর তার বাড়ির সামনেই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur