Home / চাঁদপুর / চাঁদপুর আল মানার হাসপাতাল ও চিকিৎসকের গাফলতিতে নবজাতকের মৃত্যু
Al-manar-hospital

চাঁদপুর আল মানার হাসপাতাল ও চিকিৎসকের গাফলতিতে নবজাতকের মৃত্যু

চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গাইনী চিকিৎসকের আল্ট্রাসনোগ্রামের ভুল রিপোর্টে প্রসূতির প্রসবপূর্ব সতর্কতা না থাকায় নবজাতকের মৃ*ত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৯ জুলাই সকাল ৯টায় সদর উপজেলার মান্দারী গ্রামের মো. ইয়াছিন পাটয়ারীর স্ত্রী প্রসূতি ফারজানা আক্তার শহরের আল-মানার হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারী হলে এক নবজাতক জীবিত ও ৫ মিনিট পরে আরেক মৃত নবজাতকের জন্ম হয়।

এই ঘটনার পর নবজাতকের বাবা মো. ইয়াছিন পাটওয়ারী গাইনি চিকিৎসক নাসরিন পারভীন এর কাছে দু’টি সন্তান তার স্ত্রী গর্ভে আছে এমন তথ্য বিভ্রান্ত দেয়া হলো কেন জানতে গেলে তাকে চেম্বারে পায়নি। একই চেম্বার তার স্বামী ডা. সোহেল আহম্মেদকে পেয়ে অভিযোগ করলে সেখানে চিকিৎসক কর্তৃক বাক-বিতন্ডা ও লাঞ্ছিত হন ইয়াছিন। পরে তিনি এই বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় ৩০ জুলাই একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, ইয়াছিনের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে বিগত ৬ মাস যাবৎ বিভিন্ন সময়ে শহরের স্টেডিয়াম রোডের ডা. নাসরিন পারভীনের চেম্বারে গিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। এরই ধারবাহিকতায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ৩ বার আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। সর্বশেষ চলতি মাসের ১ তারিখে আল্ট্রসনোগ্রাম করা হয়। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক তার স্ত্রী ফারজানার গর্ভে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে বলে জানান। সে অনুযায়ী ইয়াছিন তার স্ত্রীর স্বাস্থ্য পরিচর্যা করে আসছিলেন।

২৯ জুলাই ভোরে ফারজানার প্রসব বেদনা উঠলে জরুরিভিত্তিতে ডা. নাসরিন পারভীনের কাছে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি চেম্বারে না থাকায় শহরের আল-মানার হাসপাতালে নিয়ে আসলে সকাল ৯টায় স্বাভাবিক ডেলিভারীতে প্রথমে জীবিত কন্যা সন্তান প্রসব এবং পরবর্তীতে আরেকজন মৃত পুত্র সন্তান প্রসব হয়।

ইয়াছিন পাটওয়ারী জানান, চিকিৎসকের ভুল তথ্যের কারণে তারা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন এবং পুত্র সন্তান মৃত হওয়ায় তাদের পরিবারের মধ্যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে তিনি বিষয়টি কেন বিভ্রান্ত তথ্য দেয়া হয়েছে গাইনী চিকিৎসকের কাছে জানতে গেলে তাকে চেম্বারে না পেয়ে তার স্বামী চিকিৎসক সোহেল আহমেদের চেম্বারে যান।

সেখানে ইয়াছিন তার ক্ষোভের কথাগুলো বলতে গেলে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে চিকিৎসক তার চেম্বারের লোকজন দিয়ে ইয়াছিনের সাথে খারাপ আচরণ করে বের করে দেয়। পরে পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপ করে আইনের আশ্রয় নেয়।

ওই সময় ইয়াছিন আরো জানান, আমি ডা. সোহেল আহমেদকে বলেছি আপনার স্ত্রী রিপোর্ট দিলো একটি সন্তানের কিন্তু আমার স্ত্রী গর্ভে দু’টি সন্তান আসলো কিভাবে। উত্তরে ডা. সোহেল আহমেদ বলেন, আপনি আরেকটি সন্তান কোথা থেকে নিয়ে এসেছেন?

এই বিষয়ে আল-মানার হাসপাতালের ওই দিনের কর্তব্যরত চিকিসক ডা. বায়েজিদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ফারজানার গর্ভে আগেই একটি সন্তান মৃত ছিলো। কন্যা সন্তান প্রথমে জন্ম হয়, সেও অসুস্থ ছিলো। একটি সন্তান মৃত প্রসব করায় হাসপাতাল থেকে নিয়মানুযায়ী সে সন্তাটির মৃত্যুর সনদ প্রদান করি।

এই বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ডা. নাসরিন পারভীনের চেম্বারে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার স্বামী অভিযুক্ত চিকিৎসক সোহেল আহমেদ ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে একটি সন্তান রয়েছে বলেই রিপোর্ট দেয়। অনেক সময় গর্ভের সন্তান রিপোর্ট দেখে দু’টি সন্তান নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। কারণ গর্ভে থাকা শিশুর অবস্থানের পরিবর্তন হয়।

তিনি আরো জানান, এই বিষয়ে আমার কাছে ইয়াছিন পাটওয়ারী নামক ফারজানার স্বামী আসলে তাকে বুঝাতে চেষ্টা করলেও তিনি উত্তেজিত হন। আমি তখন তাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে লোকজন ডেকে বের করে দেই। পরে তিনি চেম্বার থেকে গিয়ে পুলিশ নিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য চেম্বার আসেন। পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসা করলে বিষয়টি খুলে বলি।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ১ আগস্ট ২০১৯