ঢাকার বনানীর অগ্নিকাণ্ডে ফরিদগঞ্জের আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমালের মর্মান্তিক মৃত্যু সকল সাংবাদিকদের দৃষ্টি পড়ে।
‘সাত-আটজন ঘিরে আছে তাকে। এর বাইরেও সাংবাদিকদের ক্যামেরা, ছবি তোলার ভিড়ে যেন দম পাচ্ছিলেন না। ঘামে, কান্নায় অস্থির মাঝে মাঝেই চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না, আমার ভাই নাই। যত টাকাই লাগুক আমার ভাইরে চিকিৎসা করান। আ আ আ…(কান্না)।’
ভাইয়ের জন্য বিলাপকারী এই ব্যক্তির নাম আব্দুল আল মামুন। তার ভাই আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমাল রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফআর টাওয়ারে আগুনে মারা গেছেন। তমালের মরদেহ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে।
আমদানি-রপ্তানিতে পণ্য পরিবহনের কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক ছিলেন তিনি। এই এফ আর টাওয়ারেই ছিল তার অফিস।
ভবন থেকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
তমালের এক ছেলে ও এক মেয়ে। প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের নাম মানহা। তবে ছেলের বয়স দুই বছর। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড শ্রীকালিয়া মুন্সী বাড়ির মুকবুল আহমেদেও ছেলে। তিনি থাকতেন রাজধানীর শারুলিয়া ডেমরায়।
বিষয়টি ফরিদগঞ্জ ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি পাটোয়ারী বাবুল নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে চাঁদপুর টাইমস নিশ্চিত করেছেন।
তমালের বন্ধু মুস্তফা কামাল জানান, যখন আগুন লাগে তখন তমাল ছিল ১১ তলায়। সর্বশেষ তমালের সঙ্গে তার বেলা সাড়ে ৩টায় ফোনে কথা হয়। তখন সে ১২ অথবা ২২ তলায় ছিল। তারপর থেকে ফোনে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে তারা জানতে পারেন তমাল মারা গেছে।
নিহত আব্দুল্লাহ আল ফারুকের পকেট থেকে তিনটি আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। আইডি কার্ডেও তথ্য অনুযায়ী, তিনি ১৯৮৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ মকবুল আহমেদ এবং মায়ের নাম জান্নাতুল ফেরদৌস।
তিনি নটর ডেম থেকে ব্যবসায় শিক্ষায় ২০০৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলে থাকতেন তিনি। ২০১০-১১ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন ফারুক।
পড়াশোনা শেষে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর সর্বশেষ ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডে সেলস ম্যানেজার হিসেবে কমর্রত ছিলেন। রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফআর টাওয়ারে ছিল তার অফিস। অফিসে কর্তব্যরত অবস্থায় আগুন লাগলে তার মৃত্যু হলো।
টেলিভিশনে আব্দুল্লাহ আল ফারুক তমালের নাম দেখে ঢামেক হাসপাতালে ছুটে আসেন তার বন্ধু রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন,‘তমাল ভালো ছাত্র। পড়াশোনার বাইরেও বিভিন্ন কর্মকান্ডে তার অংশগ্রহণ ছিল। তমাল স্ত্রী ও এক মেয়েকে রেখে আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিল।’
প্রতিবেদক:জহিরুল ইসলাম জয়
২৮ মার্চ,২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur