৩ জুলাই ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাহাদতবার্ষিকী । ১৭৫৭ সালের এ দিনে উপমহাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক-বাংলা,বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করা হয়।
২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে তথাকথিত যুদ্ধে পরাজয়ের পর সিরাজউদ্দৌলা শিশুকন্যা জোহরাকে নিয়ে গোপনে নৌকাযোগে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। পথিমধ্যে রাতযাপনের জন্যে রাজমহলের এক মসজিদে আশ্রয় নিলে এর মোতাওয়াল্লি দানেশ ফকির বিশ্বাসঘাতকতা করে নবাবকে শত্রুপক্ষের হাতে তুলে দেন।
মালদহের ফৌজদার মীরজাফরের ভাই দাউদ খান নবাবকে সপরিবারে বন্দী করে মীরজাফরের জামাতা মীর কাসেমের হেফাতে মুর্শিদাবাদ পাঠিয়ে দেন।
কুখ্যাত মিরনের আদেশে আলীবর্দী খাঁর পালিত নিমকহারাম মোহাম্মদী বেগ জাফরগঞ্জ প্রাসাদে নির্জন কক্ষে ২ জুলাই গভীর রাতে নৃশংসভাবে সিরাজকে হত্যা করে।
সিরাজউদ্দৌলা সততা,দক্ষতা আর দেশপ্রেম নিয়ে ১৪ মাস ১৪ দিন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা শাসন করেন। মাতামহ আলীবর্দী খাঁ শত্রুদের দমন আর প্রজাদের কল্যাণে তাকে নিয়োজিত করেছিলেন এবং সব অন্যায়-অবিচার দূর করার উপদেশ দেন।
মাতামহের মৃত্যুশয্যায় সিরাজ পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে শপথ করেন- দেশ, মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন। সিরাজকে পরিবারের ভেতরে-বাইরের শত্রুদের ব্যাপক মোকাবেলা করতে হয়।
নবাব পদে সিরাজের মনোনয়নে ঘসেটি বেগম,রাজবল্লভ, মীরজাফর ও শওকত জং তার প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন। মুর্শিদাবাদের শাসক শ্রেণি ও প্রভাবশালী মহল ধনসম্পদ কুক্ষিগত করার কাজে নিয়োজিত ছিল।
সিরাজ ক্ষমতায় আরোহণের সাথে সাথে এ গোষ্ঠী আশঙ্কা করে যে, তাদের জন্য তরুণ নবাব ‘বিপজ্জনক’ হতে পারেন । সিরাজের সিংহাসন লাভ ইংরেজদের জন্য ছিল হুমকিস্বরূপ,কেননা সিরাজ তাদের অধিকারের অপব্যবহার মেনে নিতে অস্বীকার করেন।
পলাশী যুদ্ধে ইংরেজদের জয় হয়েছিল ষড়যন্ত্রে এবং বিশ্বাসঘাতকতায়। নবাবের হত্যার মধ্য দিয়ে ২ শ’ বছর ব্রিটিশ গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ ছিল এ উপমহাদেশ। পলাশীর যুদ্ধের পর ধীরে ধীরে সমগ্র উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বৃহস্পতিবার দু’ পক্ষ পলাশীর প্রান্তরে মুখোমুখি হয়। নবাবের বাহিনী নিয়ে কাঠের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকেন ইয়ার লতিফ,রায় দুর্লভ, মীরজাফর,মীরমদন ও মোহনলালসহ দেশপ্রেমিক সৈন্যরা নবাবের পক্ষে যুদ্ধ শুরু করলে ইংরেজ বাহিনীর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। কিন্তু মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় একতরফাভাবে পলাশীতে জয়ী হয়ে ক্লাইভ বিজয়ীর বেশে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেন।
সে দিন প্রত্যেকে যদি একটি করেও ঢিল ক্লাইভের দিকে নিক্ষেপ করত,তবে সেখানেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলা দখলের স্বপ্নসাধ ধুলোয় মিশে যেত।
মীরজাফর,ক্লাইভ,জগৎশেঠ,ইয়ার লতিফ ও রাজবল্লভের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত মতে,সিরাজের লাশ দাফনের জন্য তাকে মুর্শিদাবাদ শহরের বাইরে নিয়ে করতে হবে। মীর্জা জয়নুল সিরাজের খন্ড-বিখন্ড লাশ ভাগীরথী নদীর ওপারে নিয়ে যান।
ভাগীরথী নদীর পানি দিয়ে সিরাজকে গোসল করান হয়। খোশবাগে নবাব আলীবর্দী খাঁর সমাধিসৌধের বারান্দায় তাকে দাফন করেন। সে থেকে এ দেশের জনগণের ভাগ্যের বিপর্যয় ঘটে। আর ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের অবসান হয়।
সিরাজউদ্দৌলা দেশের জন্যে জীবন দিয়ে আজও বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়জুড়ে। নিষ্ঠুর শোষণ নিপীড়ন ও নির্মম গণহত্যার মাধ্যমে ব্রিটিশরা মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। বিশ্ব ইতিহাসে এ অপরাধের কোনো বিচার হয়নি।
সম্পাদনায়:আবদুল গনি
:আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৩:৪০পিএম,৪জুলাই ২০১৭,মঙ্গলবার
চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur