Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের ৮৭ ইউপি নির্বাচন : দলীয় সম্ভাব্যদের দৌড়ঝাঁপ

চাঁদপুরের ৮৭ ইউপি নির্বাচন : দলীয় সম্ভাব্যদের দৌড়ঝাঁপ

গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে এবং সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্দলীয় নির্বাচনের বিধান করা হয়। সে অনুযায়ী চাঁদপুর জেলার ৮৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শুরু হচ্ছে মার্চ থেকে। তিনটি ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্যে প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এর আগে চাঁদপুর জেলার ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম গত বছরের ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়। ৮ উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমও তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।

আগামী ৩১শে জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর হালনাগাদ তালিকা দিয়েই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিগত পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও আগামী ইউপি নির্বাচনে চাঁদপুরের অনেক তরুণ ও নতুন ভোটার ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন।

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া চাঁদপুরের ৫ পৌর নির্বাচনে তরুণ প্রার্থীদের প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রেও তরুণরা অগ্রাধিকার পেলেও নতুন ও তরুণ ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত জটিলতায় ভোটে অংশ নিতে পারেনি। কিন্তু ইউনিয়ন নির্বাচনে সকল তরুণ ভোটাররা এবার অংশগ্রহণ করতে পারবেন যদি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ দলের নিয়ন্ত্রণে না থেকে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নিয়মে ভোটারদের উপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এদিকে সারাদেশের ন্যায় ইতোমধ্যে চাঁদপুরের দু’দলেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ‘সফল হউক স্বার্থক হউক’ ব্যানার আর ফেস্টুনে ভরে গেছে গ্রামের আনাচে কানাচে। তবে এসব ব্যানার-ফেস্টুনের আড়ালে রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচয়কে জানান দেয়া। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি কাড়া।

অপরদিকে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার। চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩০ জানুয়ারি চাঁদপুর শহর আর আগামী মাসের ২য় সপ্তাহে অর্থাৎ ৬ ফেব্রুয়ারি পৌর পার্কে অনুষ্ঠিত হবে চাঁদপুর সদর উপজেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখকে মাথায় রেখে তৃণমূল ও নেতৃবৃন্দের মাঝে যোগাযোগ আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাদের পক্ষে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন সম্ভাব্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। সবমিলিয়ে জেলায় দুটি দলেই তৃণমূল আর নেতৃবৃন্দের সম্পর্কে নতুন মোড় ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক হারে সাড়া পড়বে মনে করছেন দু’দলের একাধিক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

তৃণমূলদের ইউপি নির্বাচন, আর নেতৃবৃন্দের সম্মেলন আর দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ায় স্বার্থ উভয়ের মাঝে কাজ করছে। তবে সম্প্রতি হয়ে যাওয় চাঁদপুরের ৫ পৌর নির্বাচনে মাঠে থেকেও বিএনপির হেরে যাওয়াকে তৃণমূল ভালো চোখে দেখছেন না।
তাই তাদের মাঝে ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়েও একধরনের আশংকা কাজ করছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে এমনই চিত্র ভেসে উঠেছে। আবার বিএনপির সমর্থিত অনেক চেয়ারম্যান দলের বিশেষ ব্যক্তিদের আস্থাভাজন হতে না পারায় এলাকার সাধারণ জনগণের কাছে প্রিয়জন হওয়া সত্ত্বেও পুনরায় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না পাওয়ার আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।

উদাহারণ হিসেবে তারা চাঁদপুরের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত ফরিদগঞ্জ পৌর নির্বাচনে বিএনপির কোন্দলকে দেখাতে চাচ্ছেন। যেখানে তখনকার সময়ে চলমান মেয়য় মঞ্জিল জেলার বিশেষ ব্যক্তির আস্থাভাজন না হওয়ায় দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত থাকতে হলো। আর স্বতন্ত্র থেকে অনেক হুমকি-ধমকি মাথায় নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে গেলো। এই কোন্দলে আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থীর কাছে ক্ষমতায় নয় ভোটের জোরে বিএনপি সমর্থিত একাধিক প্রার্থীই হেরে যান।

এদের একজন চাঁদপুর সদরের বাগাদী ইউনিয়নের একাধিক পদক প্রাপ্তও একাধিকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী পাঠান। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হলেও দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কম থাকায় যোগ্যতা ও এলাকার লোকদের প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার আশংকায় রয়েছেন বলে তার একাধিক ঘনিষ্ঠজন নিশ্চিত করেছেন।

একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সধারণ সম্পাদক আলহাজ্বা বেলায়েত হোসেন বিল্লাল গাজীর ক্ষেত্রে একই চিত্র।

সম্প্রতি বাগাদী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পশ্চিত সকদি গ্রামের মানিক মিয়ার ব্যানারে চেয়ে গেছে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সম্প্রতি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এলাকার মাদক ব্যবসা ও নারী কেলেংকারী সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাতেও তার প্রচারণা দেখে স্থানীয় ভোটার ছাড়াও খোদ দলীয় লোকজনও অনেকটা চিন্তায় পড়েছেন। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তাহলে এই ইউনিয়নে ঐতিহ্য পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানাচ্ছেন ওই এলাকার দলীয় নেতাকর্মী।

তারপরেও হুট করে রাজনীতিতে আসা মানিক মিয়ার প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা দেখে অনেকেই এখন দলীয় বিবেচনায় প্রার্থী দেয়াকে সাধারণ জনগণের ম্যান্ডেট (মতামত)-এর সাথে সাংঘর্ষিক মনে করছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে স্থগিত দুটি পৌরসভায় প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। গত মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠকে শেষে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, জেলা, উপজেলা এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠাবে।

পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বোর্ড তৃণমূলের সুপারিশকৃত প্রার্থীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে বলে তিনি জানান।

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় থাকছেন না এমপিরা। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা রাখা হলেও এবার তাদের বাদ রাখা হয়েছে। ওই বৈঠকে স্থগিত চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি পৌরসভায় নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল লতিফকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ওই পৌরসভায় আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

গত নভেম্বরে এ সংক্রান্ত আইন সংসদে পাস হয়েছে। চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে ৬০০ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি- এ দুই শিবিরেই বইছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের হাওয়া। দুই দলই শুরু করেছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চলছে আওয়ামী লীগের। যাতে পৌরসভা নির্বাচনের সাফল্য ইউপিতেও ধরে রাখা যায়।

অন্যদিকে পৌর নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ বিএনপি করলেও ইউপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে নিশ্চিত করেছে দলটির হাইকমান্ড।

ইতিমধ্যেই চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করতে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। পৌর নির্বাচনের মতোই প্রথমবারের মতোই দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ সারা দেশের প্রায় ৬শ’ ইউপিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

দেলোয়ার হোসাইন

।।আপডেট : ৯:৩০ এএম, ২১জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ