প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার(১২ অক্টোবর) সকালে তাঁর সরকারি বাসভবণ গণভবনে জাতীয় শ্রমিক লীগের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রদান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার কোন মিথ্যা মামলা দায়ের করেনি। সৎ সাহস থাকলে আদালতে এসে মামলাগুলো যে মিথ্যা তা প্রমাণ করারও আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলাই তার ব্যক্তিগত দুর্নীতি এবং আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা সম্পর্কিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলোকে মিথ্যা বলে বিদেশিদের কাছে অহেতুক নালিশ না জানিয়ে বুকে বল থাকেতো আদালতে গিয়েই মামলা মোকাবেলা করুন। প্রমাণ করুন-এতিমের টাকা আত্মস্যাৎ করেননি, মানুষ পুড়িয়ে হত্যার হুকুমের আসামী নন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) সব জায়গায় নালিশ করে বেড়ান এসব মিথ্যা মামলা, আমি বলব এখানে কোনটা মিথ্যা।…বুকে বল থাকেতো আদালতে গিয়েই প্রমাই করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে বলেন, ‘বুকে যদি বল থাকতো- না আমি এ অপরাধ করিনি, তাহলে নিশ্চই সে আদালতে যেত।’
জাতীয় শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।
শ্রমিক লীগের সভাপতি শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে-শ্রমিক লীগের সহসভাপতি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দেখি এতিমের টাকা মেরে খাওয়া লোকজন বলে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি নেতৃবৃন্দ) আদালতে এসে প্রমাণ করেন, কোনটা মিথ্যা মামলা।’ তিনি আরো বলেন, ‘মামলা সত্য না মিথ্যা সেটা আদালতে গেলেই (মামলা ফেস করলে ) বোঝা যাবে। আপনারা কোর্টেই যেতে চান না, কনটেস্ট করতে চান না। উপরন্ত আদালত থেকে পালান। চোরের মন শুধু পুলিশ পুলিশ। আর যদি সাহস থাকতো, বুকে যদি বল থাকতো- না আমি এ অপরাধ করিনি, তাহলে নিশ্চই সে আদালতে যেত।’
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়ার প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কোন ভয় পাইনি। কারণ আমি কোন অপরাধ করিনি। তাই মামলা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলেছি আমি আদালতে গিয়ে মামলা ফেস করবো।
মামলাদাতারা সে সময় তাঁর কোর্টে যাবার ক্ষেত্রে উল্টো বিঘ্ন সৃষ্টি করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ঘাবড়ে গেল। বলল না আপনি আসবেন (আদালতে) না। আমি বললাম- মামলা দিয়েছেন ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন, কাজেই আমি আদালতে যাব এবং মামলা ফেস করব। এখন আবার বাধা দিচ্ছেন কেন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে ঐ মহিলা (খালেদা জিয়া) আদালতে গিয়ে মামলা ফেস করতেই সাহস পান না। যার একটাই কারণ- এতিমের টাকাতো তিনি চুরি করেছেন। আর এই যে এতগুলো মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন। তার হুকুমের আসামীতো তিনিই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যে হুকুম দিয়েছে-হুকুম দিয়ে দিয়ে যে মানুষ পুড়িয়েছে। আগুনে পোড়া শরির নিয়ে ভূক্তভোগী এখনও অনেকে বেঁচে রয়েছেন, স্বজনহারাদের আর্তনাদ যে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এগুলো তারা কিভাবে অস্বীকার করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারবে আর তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হবে না, কত আহ্লাদের ব্যাপার- আমি সেটাই চিন্তা করি।’
‘তিনি সব জায়গায় নালিশ করে বেড়ান এসব মিথ্যা কথা আমি বলব এখানে কোনটা মিথ্যা- যে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মেরেছে, যে মায়ের সামনে সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারার বিচার কি তাহলে বাংলাদেশে হবে না। অবশ্যই সেই বিচার হবে’,উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্যই তো আসলে তারা এত মানুষ খুন করেছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোর মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত জাতীয় পতাকা রাজাকারদের গাড়িতে তুলে দেয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন বলেন,‘যারা এদেরকে মন্ত্রী করেছে, আমার ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে, তাদের বিচারও এই বাংলার মাটিতে হবে। ’
এদের কেন বিচার হবে না সে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তিনি কবি গুরুর দুটি পংক্তি উচ্চারণ করেন- ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে ,তত ঘৃণা তারে যেন তৃণ সমদহে।’
তিনি এই বিষয়টি দেশবাসীকে বোঝাবার জন্য শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীসহ সচেতন দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, ঐ সব সাজাপ্রাপ্ত চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী- ভোট চুরি করে এমপি বানানোতেই পরবর্তীতে দেশে ধর্মের নামে মৌলবাদ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয় এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার মত অপরাধ সংঘটিত হয়।
এ সময় তিনি ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতা, ২০১৪ এবং ১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানো, সহিংসতা জঙ্গি তৎপরতায় নিহতসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের মাটিতে অনুষ্ঠানের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের অনেকেই আজকে বড় বড় কথা বললেও আমরা দেখেছি- ২০০১ সাল থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাইদের যত রকম মদদ দেয়া, শেল্টার দেয়া এমনকি আপরাধ সংঘটনের পর নিরাপদে পালাবার জন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী দিয়ে পাহাড়া দেয়া-সবই তারা করেছে। সারাদেশে ৫শ’স্থানে বোমা হামলা-এসবের বিচার হতে হবে। পাশাপাশি আমরা যে উন্নয়ন কমকার্ন্ডগুলো শুরু করেছি সেগুলোকে অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ শ্রমিকদের স্বার্থ দেখে। আমাদের রাজনীতিই হচ্ছে তাদের জন্য। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারি দল। কাজেই আমরা ক্ষমতায় আসলেই সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশের জিডিপি বতমানে ৭ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এতো এমনি এমনি আসেনি। আমরা সঠিকভাবে দেশকে পরিচালনা করছি বলেই এটা অর্জন সম্ভবপর হয়েছে।
আমার রাজনীতিটাই এদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি যত উন্নত হবে আমরা ততটাই এদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারবো।
শ্রমের মর্যাদাও আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সন্মানজনক নামকরণ এবং বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরেন।(কালের কণ্ঠ)
নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৭:৪৩ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৬ বুধবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur