দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। এর পরও প্রতিদিন বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত বন্দির পানীয় জল, থাকা, খাওয়া ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষও হিমশিম খাচ্ছে। ফলে কারাগারে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। বন্দিরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। কারা সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানায়, সম্প্রতি পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন মামলার আসামিতে দেশের সবগুলো কারাগার ভরে গেছে।
দেশের ৬৮ কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৭০৬ জন হলেও বর্তমানে রয়েছে ৭৩ হাজার ৭০১ জন, যা মোট ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। কারা অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণক্ষমতার তিনগুণেরও বেশি কয়েদি ও হাজতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণক্ষমতা দুই হাজার ৬৮২ জন হলেও ২৫ জুন সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেখানে সাত হাজার ৩০৩ জন বন্দি রয়েছে। তবে কিছুদিন আগে এ সংখ্যা আরও বেশি ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারা অধিদফতরের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনরা বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বেশি বন্দি হওয়ায় কারাগারগুলোতে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
গাদাগাদি করে বন্দিদের রাখা হচ্ছে। তীব্র গরমে বয়স্কসহ শত শত আসামি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মাপা পানিতে গোসলের সুযোগও হচ্ছে না অনেকের। একসঙ্গে বহু লোক থাকায় চর্মরোগের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বহু সংখ্যক বন্দি না ঘুমিয়ে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
এছাড়া বিপুল সংখ্যক বন্দিকে সামলাতে প্রতিটি জেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারে থাকা পাঁচ শতাধিক জঙ্গির ওপর বিশেষ নজর রাখতে গিয়ে কারা সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি সিলেটের আসামির সঙ্গে রোববার দুপুরে দেখা করতে এসেছিলেন এক তরুণ। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, জঙ্গি সন্দেহে নিকটাত্নীয়কে পুলিশ গ্রেফতার করে।
নগদ টাকায় টিকিট কিনে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তাকে (বন্দি) অঝোরে কাঁদতে দেখে তিনি নিজেই কেঁদে ফেলেছেন।
বন্দি ওই লোক তাকে বার বার জামিনের জন্য অনুনয় বিনয় করে বলছিল, জেলখানা তো নয়, যেন জাহান্নামের আগুন। গরম, গাদাগাদি করে থাকা ও খাবারের কষ্টে তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ২৮০ বন্দিকে মামলাসহ বিভিন্ন কারণে আদালতে পাঠাতে হচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ১৯০ জন নতুন আসামি আসছে। অপরদিকে, প্রতিদিন জামিনে মুক্তি পাচ্ছে গড়ে ১২০ থেকে ১৩০ জন।
সার্বিক বিষয়ে কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে কারাগারগুলোতে দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি রয়েছে এ কথা সত্যি।
সীমিত জনবল দিয়েও কারাবিধি অনুযায়ী কয়েদি ও হাজতিদের সুষ্ঠুভাবে থাকা, খাওয়াসহ মানবিক অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টা চলছে। তবে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত হওয়ায় বন্দিদের পাশাপাশি কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।(জাগোনিউজ)
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur