ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম আর নেই (ইন্না…রাজিউন)। সোমবার (২৩ মে) সকাল ১০ টায় রাজধানীর স্কয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯১ বছর।
এর আগে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ৬ই মে নূরজাহান বেগমকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ৮ই মে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
তিনি ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সাহিত্য ক্ষেত্রে মেয়েদে এগিয়ে আনার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে বেগম পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে এটি ঢাকায় চলে আসে। বেগম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সওগাত পত্রিকার সম্পাদক ও নূরজাহান বেগমের বাবা চাঁদপুরের কৃতি সন্তান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের কন্যা।
কৈশোরে কলকতায় বেগম পত্রিকার সাথে পরিচয় গড়ে উঠে সাংবাদিক কামাল লোহানীর। তিনি বলেন তখনকার সমাজে মুসলিম নারী লেখক তৈরীতে বেগম পত্রিকার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
৫০’র দশকে এই বেগম পত্রিকা তৎকালীন সমাজে শিক্ষিত মুসলিম নারী লেখকদের একটি বড় প্লাটফর্ম হয়ে উঠে।
সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, কিছুদিন সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর কবি সুফিয়া কামাল নিজের ব্যস্ততার কারণে কাজ ছেড়ে দিলে নূরজাহান বেগমের হাতে বেগম পত্রিকা গড়ে উঠে।
ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার পরে ১৯৫০ সালে বেগম পত্রিকার অফিস ঢাকায় চলে আসে। নতুন ঠিকানা হয় বর্তমানে পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলিতে। গত ৬৬ বছর ধরে এখানেই আছে বেগম পত্রিকা।
১৯৬০ এবং ১৯৭০’র দশকে প্রতি সপ্তাহে বেগম পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজারের মতো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডাকযোগে এই পত্রিকা পৌঁছে যেত। কিন্তু বেগম পত্রিকার সে জৌলুস এখন আর নেই।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন বেগম পত্রিকা শুধু নারীদের উদ্দেশ্যে করেই গোড়াপত্তন হলেও এর পাঠক শুধু নারীরাই ছিলেন না। ধীরে ধীরে এই পত্রিকা পুরুষদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
নূরজাহান বেগমের বাবা নাসির উদ্দিন একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ছিলেন।
অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, নূরজাহান বেগম শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে নয়, নিজের মেধা এবং যোগ্যতা দিয়ে তিনি বেগম পত্রিকাকে গড়ে তুলেছেন।
১৯৫২ সালে নূরজাহান বেগমের বিয়ে হয় লেখক, সাংবাদিক ও শিশু সংগঠক রোকনুজ্জামান খানের সাথে। অনেকের কাছেই তিনি ‘দাদাভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন।
নূরজাহান বেগম এমন একটি পত্রিকার ইতিহাস রেখে গেলেন যেটি এ অঞ্চলে বহু নারীকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।
এদিকে বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
অপর এক শোকবার্তয় নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি বি এম হান্নান ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী । সে সাথে তার শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা ।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৪০ এএম, ২৩ মে ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur