অপরিচ্ছন্ন , অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচরণ, অপরীক্ষিত রক্তগ্রহণ ও অসচেতনতার কারণে বিশ্বব্যাপি হেপাটাইটিস প্রদাহের বিস্তার ঘটছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়- হেপাটাইটিস ভাইরাসের ধরনগুলোকে এ, বি, সি এবং ই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের প্রকোপ বেশি।
বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের তথ্য মতে, বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত ।এ হার প্রতি ১২ জনে একজন। বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হেপাটাইটিস অনেক আগে থেকেই উদ্বেগজনক।
২০০৮ সালে বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স বিশ্ববাসিকে সচেতন করার জন্য এগিয়ে আসে এবং বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ১৯ মে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও হেপাটাইটিসের চিত্র ভয়াবহ। দেশে বর্তমানে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। সুপ্ত অবস্থায় আছে ১২ লাখ লোকের ভেতর। হেপাটাইটিসে লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
চিকিৎসকদের মতে, হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস এইচআইভি এইডসের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ লোক এইডসে মৃত্যুবরণ করে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিদিন হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসজনিত লিভারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছে। দেশে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে প্রায় ৩% হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রন্ত। এর মধ্যে যাদের শরীরে ই-এন্টিজেন পজেটিভ রয়েছে তাদের নবজাতকের শরীরে এ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় ৯০ %।
দীর্ঘদিন মদ্যপান ও স্থূলতার কারণে যকৃতে চর্বি জমাসহ বিভিন্ন কারণে লিভারে ক্ষত সৃষ্টি হয়। দেশে ৮% মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত । এ ভাইরাস দু’ভাবে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত রোগী থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে রক্তগ্রহণ ও সিরিঞ্জ, দৈহিক মিলন ও ক্ষুর বা ব্লেড ব্যবহারের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত মা থেকে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। যারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত তাদের ২০% ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে লিভার সিরোসিসে মৃত্যুবরণ করে। আর সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ৩% থেকে ৪% মানুষ।
‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই লিভার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ট্রনিক হেপাটাইটিস লিভারসিরোসিস তৈরি করে। এর কিছুদিন পর লিভার সিরোসিস সংক্রান্ত জটিল রোগ থেকে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এ ভাইরাস ‘বি’ ভাইরাসের মতো করেই শরীরে প্রবেশ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানবজাতির একটি প্রধান রোগ হিসেবে বিবেচিত হেপাটাইটিস ‘বি’। পৃথিবীতে ২০ কোটি লোক এ ভাইরাস সংক্রমণের শিকার। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের শিকার আনুমানিক ৩৫ কোটি লোক। অন্য এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হেপাটাইটিস বি ও সি’র সংক্রমণে প্রতিবছর প্রাণ হারায় ১০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।
]ডেস্ক থেকে সম্পাদনা আবদুল গনি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:০৫ পিএম, ১৯ মে ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ