চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তিতে ৫ম শ্রেণি পড়–য়া এক দিনমজুরের কন্যাকে (১২) ধর্ষণ করেছে আব্দুল কাদের (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ। ওই ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে ওই শিশুর ইজ্জতের মূল্য ধার্য হয়েছে ২ লাখ টাকা। এ চাঞ্চল্যকর অসম ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউপি’র আলীপুর গ্রামের কাজী বাড়িতে।
ধর্ষিতা শিশুর পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, ওই বাড়ির মৃত কাজী সামছুল হকের পুত্র ইঞ্জিনিয়র (অব.) আব্দুল কাদের (৭৫) দীর্ঘদিন শিপিংয়ে কর্মজীবন শেষ করে নিজ এলাকায় একটি মুড়ি ও স’মিল সহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। সে সুবাদে তিনি গ্রামের বাড়ি আলীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এরই মধ্যে আবদুল কাদেরের স্ত্রী পারুল বেগম (৬০) বাতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অকর্মা হয়ে পড়ে। এ দুরবস্থায় সংসারের চাকা আটকে যায়। এ সুযোগে সু-চতুর কাদের একই বাড়ির স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া জনৈক দিনমজুরের কন্যাকে (১২) তার বাসায় লেখাপড়া ও কাজের প্রস্তাব দেয়। ওই শিশুর অভাবী পরিবার প্রস্তাবটি লুফে নেয়। এভাবে শুরু হয় তার কাদেরের বাসায় অবাধে যাতায়াত। এ সুযোগে কাদের শিশুকে কাছে পেতে ফন্দি আঁটা শুরু করে। নতুন করে প্রস্তাব দেয় অংক, ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিনেপয়সায় প্রাইভেট পড়ানোর। এ প্রাইভেটের পাশাপাশি শুরু হয় যৌনলীলা। প্রথম প্রথম অবুঝ ওই শিশু কাদেরের এসব প্রস্তাবে বাধা ও অসঙ্গতি জানালেও সু-কৌশলী কাদের তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তার যৌনলীলা চরিতার্থ করতে বাধ্য করে। ক্রমেই সে তার যৌনদাসীতে পরিণত হয়। এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর এ বছরের জানুয়ারি মাসে শিশুর মা এবং বড় বোন তার শরীরের অসঙ্গতি দেখে ঘটনা জানতে চাপ প্রয়োগ করলে সে কাদেরের কুকীর্তি ফাঁস করে দেয়।
এখবর প্রকাশের পর অর্থের বিনিময় ঘরোয়াভাবে একটি আপোষরফা হয়। কিছুদিন যেতেই ওই সমঝোতা চূড়ান্ত রূপ না পাওয়ায় ঘটনাটি বাড়ির আঙ্গিনা গড়িয়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে অভিযুক্ত কাদের গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপন করেন।
এভাবে দীর্ঘদিন চলার পর শিশুর পরিবার শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট লিখিত এবং মৌখিক অভিযোগ দায়েরের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা আর হয়ে উঠেনি।
এদিকে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা তথ্য সংগ্রহের জন্য ওই গ্রামে গেলে আবদুর কাদেরের ঘরে তালা ঝুলন্ত দেখা যায়। ওই সময় বাড়ির সামনে তার স্থাপিত মুড়ির মেইলে শ্রমিকদের নিকট কাদেরের অবস্থান জানতে চাইলে শ্রমিকদের মধ্যে রুহুল আমিন ও ফিরোজ জানায়, ‘রেফ কেইচে’ স্যার এলাকার বাইরে রয়েছেন।
এ কথা বলতেই কাদেরের ব্যবসায়িক পার্টনার শাহ আলম মৃধা সংবাদকর্মীদের তেড়ে এসে শাসিয়ে দেন।
এদিকে শিশুর এক স্বজন জানান, ওই বিষয়ে গত সপ্তাহে স্থানীয় গণ্যমান্য ও বাড়ির বিশেষ দুই ব্যক্তির উদ্যেগে ঘটনাটি ২লাখ টাকায় আপোষরফায় হয়। সঙ্গে শিশুর পরিবারকে গণমাধ্যম সহ কারো নিকট মুখ না খুলতে নিষেধ করা হয়। এ সমঝোতার বিষয়ে শিশুর পরিবারের সদস্যদের নিকট জানতে গেলে তারা ঘর থেকে ভয়ে পালিয়ে যায়।
মাজহারুল ইসলাম অনিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চাঁদপুর টাইমস
|| আপডেট: ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, ০১ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur