আগামী তিন বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে ইলিশ চাষ করা সম্ভব।
পুকুরে ইলিশের চাষ শুরু হয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিসের অর্থায়নে উপকূলীয় মৎস্য প্রকল্পের আওতায় বংশবিস্তারে পুকুরে ইলিশের চাষ করছে পটুয়াখালী মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র।
পুকুরে ইলিশ চাষের এ প্রকল্প শতভাগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে ইলিশ চাষ করা সম্ভব। এতে জাতীয় অর্থনীতিতে ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইলিশ আরো বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়া আন্ধারমানিক নদী থেকে ইলিশের পোনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তা নির্দিষ্ট পুকুরে এনে চাষ করা হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে ইলিশ চাষের আদ্যোপান্ত জানতে এই প্রতিবেদক যান আন্ধারমানিক পয়েন্টে। ভোর তখন ৫টা। কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদী থেকে গভীর বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা হন পটুয়াখালী মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক ও তার সহকর্মীরা। উদ্দেশ্য তিন থেকে চার মাস বয়সী ইলিশের পোনা সংগ্রহ।
সকাল ১০টার দিকে গভীর বঙ্গোসাগরের ইলিশের জোন হিসেবে পরিচিত মাঝেরচর ও খ্যাপেরচর এলাকায় জোয়ার শুরু হতেই বিশেষ জাল দিয়ে ইলিশের ছোট পোনা সংগ্রহ করেন গবেষণা কেন্দ্রের কর্মীরা।
সাগর থেকে ছোট ইলিশ পোনা তুলে তা লোনা পানি ভরা বিশেষ পলিথিনে রাখা হয়। পোনাগুলোকে জীবিত রাখতে ওইসব পলিথিনের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এ কাজ পুকুরে ইলিশ চাষের প্রথম ধাপ।
পোনা সংগ্রহ শেষে স্পিডবোটে বিকেল ৩টায় উপকূলে গবেষণা কেন্দ্রে ফেরত আসে পুরো দল। পরে পলিথিনের ব্যাগ থেকে গবেষণাগারের ৯টি পুকুরে ছাড়া হয় পোনা ইলিশ।
দায়িত্বরতরা জানান, এসব পুকুরে প্যাটেল হুইল অ্যারোটল দিয়ে কৃত্রিম ঢেউ সৃষ্টি করে পোনার স্বাভাবিক চলাচলের গতি ঠিক রাখা হয়। পাশাপাশি এয়ার ব্লোয়ার দিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন মজুত ঘনত্ব দেওয়ার জন্য ৯টি পুকুরে ৩টি ট্রিটমেন্ট এবং ৯টি রেফ্রিগেশনের মাধ্যমে পোনাগুলোকে সচল রাখার চেষ্টা করা হয়।
এদিকে, পুকুরে ইলিশ চাষের এ উদ্যোগে খুশি উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। তারা জানান, এভাবে সাগরের ইলিশ পুকুরে চাষ করা গেলে মাছ শিকারে আর গভীর সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হবে না।
ইলিশ শিকারী ছোবহান, আশরাফ, গণি প্যাদা জানান, এতে তারা খুব খুশি। এর ফলে নিজেদের বাড়ির পুকুরেই তারা ইলিশ চাষ ও শিকার করতে পারবেন।
পটুয়াখালী মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির এ কৌশল বের করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় পরিবর্তিত অবস্থায় খাপ খাওয়ানো, পুকুরে অভ্যস্ত করা, বংশবৃদ্ধি, বাঁচার হার, সহ্য ক্ষমতা ও খাদ্যাভাস নিয়ে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমেই পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু করেন তিনি।
তিনি জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রথম দফায় পুকুরে ছাড়া ছোট পোনা ইলিশের মৃত্যুর হার খুবই কম। মাছগুলো পুকুরে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করায় আশার আলো দেখছেন তিনি।
মোহাম্মদ আশরাফুল হকের আশা, এ প্রক্রিয়ায় শতভাগ সফল হলে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে ইলিশ চাষ সম্ভব হবে। (বাংলানিউজ)