বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক আখ্যা দিয়ে এর সদস্যদের দেশ ও জাতির প্রয়োজনে যে কোনো সময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৯ম টাইগার্স পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সশস্ত্রবাহিনী দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনাবাহিনীকে সময়ের সাথে তাল মিলেয়ে একটি দক্ষ, সুশৃংখল এবং শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ এর আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল ২০৩০ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আলোকে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলেও তাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে নিজ বাহিনী তথা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। সেবা ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশের মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। গভীর দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠার সাথে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৯ম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে সেন্টারে অবস্থিত ‘অজানা শহীদ’ সমাধিতে পুুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত তিন বাহিনীর প্রধান, সরকারের মন্ত্রী ও এমপি পরিষদের সদস্য, সাবেক সেনা প্রধানরাসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুই বাীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তাফা কামাল ও বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমানসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল সদস্যকে স্মরণ করেন। একই সাথে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মেজর এম এ গণি, রেজিমেন্টের পথিকৃত জেনারেল এম এ জি ওসমানীর অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
এরআগে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ও ৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকার সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সেনা নিবাসে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে পৌনে ৩টার দিকে সিডিএর ৬ টি প্রকল্প উদ্বোধন করতে সড়কপথে অনন্যা আবাসিক এলাকায় আসবেন। সেখানে তিনি নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এবং কুয়াইশ রাস্তার মাথায় স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দেশের সবচেয়ে বড় ম্যুরালটি উদ্বোধন করবেন।
পরে কদমতলী ওভারপাসের উদ্বোধন, আউটার রিং রোড, বায়েজিদ বোস্তামি বাইপাস সড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম চেম্বারের একশ’ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগদান এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানযোগে ঢাকায় ফিরে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো চট্টগ্রামকে। প্রধানমন্ত্রী যে এলাকা দিয়ে যাতায়াত করবেন সেই সব এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শনিবার ফিরে গেলেও রোববার চট্টগ্রামে আসবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে চ্যান্সেলর হিসেবে যোগ দেবেন তিনি।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ২:১৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬,শনিবার
ডিএইচ