স্বপ্ন দেখার অভ্যাস মানুষের মজ্জাগত। অনেক সময় স্বপ্নে উঁকি মারেন মৃত আত্মীয়-বন্ধুরা। এর তাত্পর্য কী? কী কারণে ঘুমের মাঝে তাঁদের আগমন ঘটে? কী বার্তা দিতে চান তাঁরা? এমন একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেন বিশেষজ্ঞরা।
ইহজীবনের মায়া কাটিয়েছেন বেশ কয়েক বছর। আচমকা পর পর তিন দিন সেই প্রিয় বন্ধুকে স্বপ্নে দেখতে পেলে চমকে ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন স্বপ্ন দেখার অর্থ কী? স্বপ্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, তাত্পর্য খুঁজতে গেলে সাহায্য নিতে হবে মনোবিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক মার্গের বিশারদদের।
আধ্যাত্মবাদীদের মতে, স্বপ্নের মাধ্যমে জীবিতদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চান পরলোকবাসী। জেগে থাকা অবস্থায় আমাদের পাঁচটি ইন্দ্রিয় সজাগ এবং ব্যস্ত থাকে। ফলে মৃতদের সূক্ষ্ম বার্তা-তরঙ্গ আমরা অনুভব করতে ব্যর্থ হই। ঘুমন্ত মানুষের মগজ অতি সূক্ষ্ণ বার্তাও পড়ে ফেলতে পারে। এই কারণে সেই সময়টিই বেছে নেন যোগাযোগে উত্সাহী পরলোকের বাসিন্দারা।
মনোবিদরা অবশ্য এই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, মৃত ঘনিষ্ঠজনের প্রতি যত্নশীল না হওয়ার দরুণ অবচেতন মনে অপরাধবোধ তৈরি হয়। তাঁদের মৃত্যুর পর সেই অপরাধবোধ এক মানসিক বিপন্নতা সৃষ্টি করে যার জেরে প্রায়ই মৃতদের স্বপ্ন দেখেন জীবিতরা। আসলে অবচেতনে জমে থাকা অনুশোচনা এই সময় বহির্মনে ফুটে ওঠে।
আধ্যাত্মবাদীরা বলেন, প্রধানত দুই কারণে মৃতরা স্বপ্নে আবির্ভূত হন। প্রথমত, জীবিত ঘনিষ্ঠজনের থেকে তাঁরা কোনও সাহায্য প্রার্থনা করেন যা পরলোকে তাঁদের যাত্রা সুগম করতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনও জীবিত ব্যক্তির উপর তাঁর ক্ষোভ থাকলে অথবা কারও উপর প্রতিহিংসা নিতে চাইলে জীবিত আত্মীয় বা বন্ধুদের সাহায্যে তা চরিতার্থ করতে চান বলেই স্বপ্নে এসে দেখা দেন। তবে দ্বিতীয় কারণটি সচরাচর ঘটে না।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন একই মৃত ব্যক্তি যদি অন্তত তিন বার স্বপ্নে উপস্থিত হন, তবেই স্বপ্নটির আধ্যাত্মিক তাত্পর্যের সম্ভাবনা থাকে। তাঁদের মতে, মৃত ব্যক্তির যদি বিশ্বাস থাকে যে নির্দিষ্ট জীবিত মানুষটি তাঁর উপকার করবেন, তবেই বার বার তাঁর সঙ্গে স্বপ্নে দেখা করার চেষ্টা করেন।
সাধারণত দীর্ঘ দিন ধরে অসুখে ভুগে মারা গেলে অথবা জরাঘটিত মৃত্যু ঘটলে সেই ব্যক্তির স্বপ্ন ঘন ঘন দেখা যায় না। কিন্তু যাঁদের অপঘাতে বা আচমকা মৃত্যু হয়, ঘনিষ্ঠরা তাঁদেরই একাধিক বার স্বপ্নে দেখতে পান। আধ্যাত্মবাদীদের ব্যাখ্যা, বেশ কিছু দিন ধরে রোগে ভুগলে মানসিক ভাবে মৃত্যুর জন্য তৈরি হয়ে যায় মানুষ। কিন্তু অপঘাতে বা হঠাত্ মৃত্যু হলে মন তার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সারতে পারে না। এই কারণে পরলোকে পৌঁছেও স্বস্তি মেলে না। তাই জীবিত বন্ধু-পরিজনদের স্বপ্নে ঘন ঘন হাজির হয় সেই বিদেহী আত্মা। তাঁদের সাহায্যে পরলোক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আকুতি জানান তিনি।
ডেস্ক ।। আপডেট : ০৭:০৪ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur