চিকিৎসক সংকটের মধ্যদিয়ে চলছে আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা।
যেখানে জরুরী বিভাগে চব্বিশ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের জন্যে ৩টি পদ রয়েছে সেখানে মাত্র একটি পদে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। তিনটি পদের মধ্যে দুটিই পদশূন্য রয়েছে।
যারা দায়িত্বে রয়েছেন কিংবা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনের জন্যে নির্দেশনা দেন তারাও জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনে কৌশলী হয়ে অনিহা দেখাচ্ছেন। অনিহার কাতারে নারী চিকিৎসকদের সংখ্যাই বেশি।
খোঁজে নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার জন্য ৮ টি পদ বহাল থাকলেও চাঁদপুর জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মাত্র তিনটি পদ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি পদই শূন্য।
তবে অন্য বিভাগের চিকিৎসক থাকলেও জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে তাদের অনিহা প্রকাশ। যার কারণে প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা হয়রানি ও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
হাসপাতালে কয়েকদিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, যখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো রোগী আসেন তখন তাদের চিকিৎসাসেবার জন্য জরুরি বিভাগের সামনেই ১১৬ নম্বর কক্ষে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে মেডিকেল অফিসার না থাকার কারণে তারা হাসপাতালের আর এমওর ১১১ এবং ১১৪ নম্বর কক্ষে চলে যান। তখন বাধ্য হয়েই রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন আরএমওগণ।
এক্ষেত্রে রোগীদের কক্ষ খুঁজতে গিয়েও তাদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই যা হবার তাই হচ্ছে। হাসপাতালে একাধিক চিকিৎসক নিয়োগ থাকলেও জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন না কেউ। তাই চিকিৎসক সংকটের মধ্য দিয়েই চলছে এ বিভাগটি চিকিৎসাসেবা।
খবর নিয়ে জানা যায়, জেলার এ হাসপাতালটিতে বিভিন্ন চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞ বেশ কিছু সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়েছে। তবে এসব চিকিৎসকদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী চিকিৎসক। যদিও হাসপাতালের নারী-পুরষ উভয় চিকিৎসকরাই জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার নিয়ম রয়েছে কিন্তু সে নিয়ম মানছেন না কেউই।
সকল চিকিৎসরাই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে অনিহা প্রকাশ করেন। এছাড়া যেসকল নারী চিকিৎসক রয়েছে তাদের মধ্যে হাতে গনা কয়েকজন প্রতিদিন আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করলেও জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন না কেউই। জরুরি বিভাগের দায়িত্ব পালনে তাদের চরম অনিহা রয়েছে।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রায়ই দেখা গেছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের কক্ষটি খোলা আছে ঠিকই কিন্তু সেখানে কোন জরুরি মেডিকেল অফিসার নেই। আর জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) গন।
গত কয়েক মাস ধরে সরজমিনে দেখা যায়, প্রায়ই জরুরি বিভাগের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন দুইজন আরএমও।
কিন্তু যেখানে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নির্দিষ্ট মেডিকেল অফিসার নিয়োগ রয়েছে, কিংবা অন্যান্য নারী পুরুষ চিকিৎসক রয়েছে সেখানে তাদেরকেই ঘুরে ফিরে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
যদিও জরুরি বিভাগে তিনটি পদের মধ্যে দুটি পদশূন্য রয়েছে কিন্তু সেখানে তো অন্যান্য চিকিৎসক নিয়োগ রয়েছে। তারা যদি নিয়মিত জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে হয়তো বা জরুরি বিভাগের এ চিকিৎসক সংকট থাকবে না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এমও) ডাঃ আসিবুল আহসান চৌধুরীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, অন্যান্য জেলায় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার জন্য পদ থাকে ৮টি। কিন্তু আমাদের চাঁদপুর সদর হাসপাতালে এ বিভাগে পদ রয়েছে তিনটি, তারমধ্যে দুটিই পদই শূন্য।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রদান ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিবসহ যখন উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ যখন চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শননে এসেছেন, তখন এ বিষয়ে তাদেরকে মৌখিক এবং লিখিত ভাবে আমরা আবেদন করেছি।
ওই সময় তারা বলেছেন অন্যান্য জেলা সদর হাসপাতালে ৮টি পদ দিয়ে জরুরি বিভাগ চললেও ওই ৮টি পদ দিয়ে কখনোই একটা হাসপাতালে জরুরি বিভাগ চালানো সম্ভব নয়। তাই হাসপাতালের যেসকল চিকিসৎসক রয়েছে তাদেরকেই ঘুরে ফিরে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার নিয়ম রয়েছে। আমরা আবারো এ বিষয়ে লিখিত ভাবে আবেদন করবো।’
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি