দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ২০০৭ সালের ২৮ মে গ্রেপ্তার হন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। প্রায় সাড়ে ১৭ বছর ধরে তিনি কারাবন্দী।
গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মুক্তি দিতে শুরু করেন আদালত। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার সন্তান তারেক রহমানসহ বহু নেতাকর্মী মুক্তি পেয়েছেন গত কয়েকমাসে। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাদ ছিলেন কেবল বাবর। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) আদালতের রায়ে তিনিও খালাস পেলেন।
১৭ বছরে সাত মাস ধরে টানা সাজা খেটে যাওয়া স্বামীর মামলার রায়ে খালাসের ঘোষণা এলে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী। অপরদিকে উল্লাসে মিছিল শুরু করে দেন সমর্থকরা।
বাবরের মুক্তির বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তার স্ত্রী ও ছেলে। তবে কথা বলেছেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবরকে ৭৮ দিন রিমান্ডে রাখা হয়েছিল। রিমান্ডে রাখা অবস্থায় তাকে বার বার রাষ্ট্রপক্ষ চাপ দিয়েছিল যেন তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িত করে জবানবন্দি দেন। এটি করলে তাকে আসামি না করে সাক্ষী করা হবে। কিন্তু ৭৮ দিন রিমান্ডে থাকার পরও তিনি এ ধরনের জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। তিনি (বাবর) বলেছেন, এই মামলায় তাকে আসামি করার পেছনে এটিই মূল কারণ।
মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বাবরকে খালাসের রায় দেন। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী শিশির মনির।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, কোর্ট বলেছেন, আজকেই একটি অ্যাডভান্স অর্ডার সই করে দেবেন। আমি আশা করি আজকেই এই আদেশ পৌঁছানো হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর জেল থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। কারাগারে আদেশ যথা নিয়মে পৌঁছার পর তার স্বজন, আত্মীয়স্বজন এবং গুণগ্রাহীরা যারা আছেন সবাই আইন মেনে তাকে বের করে যথা সম্মানে বাসায় পৌঁছে দেবেন। এই মামলায় ১৪ জনের সাজা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫ জন খালাস পেয়েছেন। ৫ জনের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুজনিত কারণে চারজনের আপিল বাদ হয়ে গেছে। অর্থাৎ নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এর আগে সবশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাতেও দণ্ডিত হয়েছিলেন। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর এসব মামলার আপিল শুনানি শেষে খালাস পাচ্ছেন লুৎফুজ্জামান বাবর।
বাবরের জন্ম নেত্রকোণার মদনে ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের তিনি নেত্রকোনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে লুৎফুজ্জামান বাবর ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তাকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সেনা সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় তাকে আসামি করা হয়। আদালতও তাকে এসব মামলায় বিভিন্ন সাজা দেন। দুটি মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় একটিতে।
গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় ৮ বছরের দণ্ড; ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে খালাস পান তিনি।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১৪ জানুয়ারি ২০২৪