Home / জাতীয় / রাজনীতি / রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ কমিশনের নেতৃত্বে যাঁরা
সংস্কারক যাঁরা

রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ কমিশনের নেতৃত্বে যাঁরা

রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ,দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কাজ করবে এসব কমিশন। কমিশনগুলোর প্রধান হিসেবে ছয়জনের নামও ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কমিশন গঠনের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন ড.বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন,বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান,দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড.ইফতেখারুজ্জামান,জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী,সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড.শাহদীন মালিক।

ভাষণে ড.ইউনূস বলেন, পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে। তিনি বলেন,‘এটি (পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন) পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি,সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শ সভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এ রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার একটি ধারণাও দেয়া হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা, আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

ছয়টি কমিশন গঠনের কারণ হিসেবে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,‘নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি। নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন,জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন,দুর্নীতি দমন কমিশন—এ চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।’

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো সরকারের কারও সঙ্গে আমার কথা হয়নি। বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে জেনে তারপর মন্তব্য করব। তবে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’

বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। তিনি ২০১১ সালে পদত্যাগ করেন। ড.ইফতেখারুজ্জামান হলেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক। আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ২০০১ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। শাহদীন মালিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। সফর রাজ হোসেন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন সচিব ছিলেন।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,‘লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটা ব্যাংকিং কমিশনও গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এক মাসে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আমরা এ খাতে নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আরও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে।’

সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সংস্কার করা হবে জানিয়ে ড.ইউনূস বলেন,‘আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটা জাতির সংস্কার শুধু সরকারের সংস্কার হলে হয় না। আপনি ব্যবসায়ী হলে আপনার ব্যবসায় সংস্কার আনুন। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরা তাঁদের নিজ নিজ সমিতির মাধ্যমে সংস্কার আনুন। সমিতিতে সংস্কার আনুন। নতুন করে সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধন করুন। আপনি শ্রমিক হলে আপনার ক্ষেত্রে আপনি সংস্কার করুন। আপনি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হলে আপনার ক্ষেত্রে সংস্কার করুন। আপনি প্রতিষ্ঠানপ্রধান হলে আপনার প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনুন। আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

দেশবাসীর প্রতি আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহ্বান জানান ড.মুহাম্মদ ইউনূস। বলেন,‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়,এমন কোনো কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স সাড়ে ১২ বছরের কম ছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিলের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন বেদখল হওয়া স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

নোবেলজয়ী ড.ইউনূস বলেন, সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল/সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ দেশে বিদ্যমান সব কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। এসব কালো আইন বাতিল ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে।

তিনি বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ আলোচিত পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এজি