Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের গোপনে এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ
গল্লাক

গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের গোপনে এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ী, মোটর সাইকেল ভাংচুর ও হামলার শিকার হয়ে বেশ কয়েকজন আহত হলেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ জন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোন প্রকারের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজ ও আশেপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। থানায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এই ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ডুমুরিয়া গ্রামের মো. মামুন ভূইয়া (৪৫),রিয়াজ ভূঁইয়া (২৪) ও মো. শরিফ ভূঁইয়া (৩৪)।

সরেজমিনে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জনতার আন্দোলনের রোষানলের শিকার হয়ে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। পরের দিন থেকে গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাস আত্মগোপণে চলে যান। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর ব্যানারে ওই অধ্যক্ষের নানান অনিয়ম দূর্নীতির কথা তুলে ধরে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিয়ে জানিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন,পরবর্তিতে কলেজের অন্যান্য শিক্ষকরা অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের অপসারণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষর যুক্ত আবেদন পেশ করে। কলেজের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষানূরাগীদের নিয়ে আলোচনা করে একটি এডহক কমিটি করার নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডল। পরবর্তিতে ওই কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. হারুন অর রশিদ গোপনে একটি একহক কমিটির তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে আসলে স্থানীয়রা টের পায়, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

গল্লাক

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সকালে কলেজের সহকারি অধ্যাপক ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে শিক্ষক মিলনায়তনে একটি বৈঠকে হয়। ওই বৈঠকে ইউনিয়ন জামাতের আমীর আবুল কালাম আজাদ শামীম ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্য শেষে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারীর ছেলে আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী মিঠু বক্তব্য রাখতে চাইলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী ওই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কলেজে উপস্থিত থাকলে তাদের বিতরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এসময় কলেজের প্রধান ফটকে তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এর পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাস ও স্থানীয় গল্লাক বাজার, বসতবাড়ীতে হামলা ভাংচুর করা হয়। হামলায় অংশ গ্রহণকারীরা সকলেই বিএনপির সমর্থক। একপক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি লায়ন মো. হারুনুর রশিদের সমর্থক। অপর পক্ষ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ হান্নানের সমর্থক।

একপক্ষের দাবী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারীর ছেলে ও সাবেক যুবদলনেতা মাহবুব মোরশেদ কচিকে ওই কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি করা হউক। অপর পক্ষের দাবী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদকে এডহক কমিটির সভাপতি করা হউক।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারীর ছেলে ও সাবেক যুবদলনেতা মাহবুব মোরশেদ কচি বলেন, এই কলেজে নিয়ে আমাদের পরিবারের অনেক শ্রম আছে, ঘাম ঝরিয়েছি, সরকারি নির্দেশনায় কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এডহক কমিটি জমা দিতে গেলে একদল লোক শিক্ষকদের হাত থেকে ফাইল চিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কলেজের সিনিয়র শিক্ষক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুন স্যারের সাথে ওই দুর্বোত্তরা অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে। আমি ফরিদগঞ্জ থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়গুলো উত্থাপন করে আসছি।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ হরিপদ দাস নানান অনিয়ম দুর্নীতির কারনে আত্মগোপণে রয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি, জামাতসহ রাজনৈতিক, শিক্ষানুরাগীদের সাথে সমন্বয় করে এডহক কমিটি গঠন করার জন্য। কিন্তু সহকারি অধ্যাপক মো. হারুন অর রশিদসহ একটি চক্র গোপণে এডহক কমিটি করেছে। তাদের এমন কর্মকান্ডের বিষয়টি স্থানীয় সচেতন মহল উত্তেজিত হয়েছে। তবে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে আমি চেষ্ট করে যাবো।

কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, জানতে পেরেছি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারীর ছেলে মাহবুব মোরশেদ কচিকে এডহক কমিটির সভাপতি করে কারা যেন ইউএনও অফিসে একটি তালিকা জমাদেন। এ ঘটনার সাথে আমি সম্পৃক্ত নয়। তবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একে মো. আলী জিন্নাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এডহক কমিটি হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। যেনেছি ওই কলেজে এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমি চাই সমাঝোতার মাধ্যমে এডহক কমিটি গঠন করে জমা দেয়া হউক। যেন কোন বিতর্ক না থাকে।

থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হানিফ সরকার বলেন, ওই এলাকায় মারামারির একটি অভিযোগ পেয়েছি। যতটুকু শুনেছি কলেজের কমিটি করাকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। আইনশৃঙ্খার অবনতি হলে অপরাধী কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডল বলেন, এডহক কমিটিকে নিয়ে গল্লাক কলেজে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তা আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমি তাদের সাথে কথা বলবো।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪