Home / শীর্ষ সংবাদ / হাজীগঞ্জে প্রায় সব গ্রামে পানি জমে জলাবদ্ধতা, জনদুর্ভোগ চরমে
জলাবদ্ধতা

হাজীগঞ্জে প্রায় সব গ্রামে পানি জমে জলাবদ্ধতা, জনদুর্ভোগ চরমে

টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে মানুষের পুকুর ও প্রজেক্টের পাড় ভেসে মাছ খাল বিলে চলে যায়। এখনো বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষকরে কাজ করতে না পেরে বিপাকে শ্রমজীবী মানুষজন। ভাদ্র মাসের এই ভারী বৃষ্টিতে কৃষকের সবজি খেতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রায় সবগুলো গ্রামে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষকরে দক্ষিণ অঞ্চলের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘর থেকে বের হতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষজন।

এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বেড়ীবাঁধ এলাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় মানুষের ঘর বাড়ীতে পর্যন্ত পানি ডুকে যায়। পাকের ঘরে পানি প্রবেশ করায় রান্নাবান্না পর্যন্ত করতে পারছেনা। বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বিকল্প পদ্ধতিতে মানুষ রান্নাবান্না করতে গিয়ে পড়েছে বিপাকে। গত কয়েকদিনে এখানকার মানুষ ঘরবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে।

ফরিদগঞ্জ নারিকেলতলা গ্রামের রাশেদ বেপারী ও আব্দুল ছাত্তার পাটোয়ারী বলেন, আমাদের বেড়ীর ভিতরে সব রাস্তা ঘাট, ঘর বাড়ী পানিতে ডুবে গেছে। বাড়ীতে গৃহিণীদের রান্না ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে রান্নাবান্না করতে গিয়ে হিমসিমে পড়তে হয়। বিকল্প জ্বালানি হিসাবে গ্যাসের বোতল ও তলা চুলা ব্যবহার হচ্ছে।

হাজীগঞ্জ পালিশারা এলাকার জসিম কাজী ও ওসমান গণি বলেন, খুব সকালে বৃষ্টির কারণে কোনোমতে বাজারে আসলেও টানা বৃষ্টির কারণে দোকান খোলা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হলেও আজকে এক টাকাও আয় হয়নি। খালি হাতে ফিরতে হবে বাড়ি।

হাজীগঞ্জ বিশ্বরোডের চা দোকানী গনেশ দ্যা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে দোকান খোলা সম্ভব হয়নি। তবে দোকান খুললেও কাষ্টমার পাওয়া যাবে না, কেননা বিশ্বরোড চত্বরেই যত পানি, এতে মানুষ কিভাবে আসবে।

হাজীগঞ্জ বাজারের রিকশাচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, একদিন রিক্সা নিয়ে বের হতে না পারলে ধারদেনা বেড়ে যায়। গত রবিবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বাইরে মানুষের চলাফেরা কমে গেছে। রিকশা বন্ধ করে ঘরে বসে দিন পার করছি। এই বয়সে ভিজলে অসুস্থ্য হতে হবে নির্ঘাত। আগের মতো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নাই। গতকাল থেকে রিক্সা বের করতে না পারায় সমস্যা তৈরী হয়েছে। রাতের খাবার নিয়ে চিন্তায় আছি।

ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, ভারি বর্ষনের ফলে কাপড়ের দোকান খোলা সম্ভব হয়নি। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষায় আছি, বৃষ্টি কমলে দোকান খুলবো। কিন্তু বৃষ্টি কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। বাড়িতে ছেলেমেয়েদের সময় দেই।

এদিকে গত দুইদিনের টানা বর্ষণের কারণে রংপুর নগরীর অনেক এলাকায় বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করছে। অনেকের খাট পর্যন্ত পানি উঠেছে। আবার অনেকের ঘরের আসবাবপত্র ভিজে গেছে ইতোমধ্যে। অনেকেই আবার উচু স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে আসবাবপত্র।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে হাজীগঞ্জ বাজারে অটো রিক্সার সংখ্যা অনেক কম। ফলে অটো রিক্সা চালকরা ভাড়া চাচ্ছেন ইচ্ছামতো। বাড়তি অর্থ গুণতে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন বাক- বিতণ্ডায়। বাড়তি ভাড়া দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে কলেজ আসা রিক্সা ভাড়া ৩০ টাকা, অটো ভাড়া ১০ টাকা। অথচ আজকে বৃষ্টির কারণে রিক্সা ভাড়া ৫০ টাকা চাচ্ছে, অটো ভাড়া ২০ টাকা চাচ্ছে। বাধ্য হয়েই সকালে বেশি ভাড়া দিয়ে কলেজে আসতে হয়েছে। এখন বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। এমন অভিযোগ করলেন আরো কয়েকজন।

এদিকে কেউ কেউ বলছে টানা বৃষ্টিপাতের রেকর্ডে হয়তো পুরাপুরি বন্যা হয়ে যাবে। অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা বা জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ নিলেও এবার দেশের এ পরিস্থিতিতে কারো দেখার সম্ভাবনা নাই। টানা এ বৃষ্টিতে অর্থশালী ও প্রশাসনের সৃষ্টি কামনা করছেন ঘরবন্দী সাধারণ মানুষ।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২১ আগস্ট ২০২৪