কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িতদের শ্রীলঙ্কার মতো সহিংসতা এবং সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা কোনও সাধারণ আন্দোলন ছিল না।
বুধবার (জুলাই ৩১) দুপুরে গণভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা কোনও সাধারণ আন্দোলন ছিল না। এটা একপর্যায়ে প্রায় সন্ত্রাসী আক্রমণের মতো হয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সহিংসতায় জীবন ও সম্পদহানির কথা দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা (বিশৃঙ্খলাকারী) তো আসলে শ্রীলঙ্কা টাইপ সহিংসতা এবং সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছে।’
এ সময় ভারতের হাইকমিশনার বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জীবন ও সম্পদহানির ঘটনায় শোক জানান।
ধারাবাহিকভাবে পরিস্থিতির স্বাভাবিক হওয়া এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসাকে স্বাগত জানান প্রণয় ভার্মা।
ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত সবসময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ভিশন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকে সমর্থন করে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর প্রসঙ্গে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সফল সফর অর্থবহ ফলাফল অর্জন করেছে এবং যা অতীতের অর্জনকে সুসংহত করেছে এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতার একটা ব্লু-প্রিন্ট সৃষ্টি করেছে।’
হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘দুই দেশের যে জাতীয় ডেভেলপমেন্ট ভিশন, বাংলাদেশের ২০৪১ এবং ভারতের ২০৪৭ ভিশনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সহযোগিতার একটা নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। ডিজিটাল ও গ্রিন অংশীদারত্ব, স্যাটেলাইটের যৌথ উন্নয়ন, ব্লু-ইকোনমি, ওশানোগ্রাফি, ফিনটেকসহ নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা হবে।’
আঞ্চলিক কানেকটিভিটি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চার দেশের (বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপাল ও ভুটান) মধ্যে কানেক্টিভিটি জোরালো করার জন্য আমার সব দরজা খোলা।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রমুখ।
আহতদের খোঁজ-খবর নিতে কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘জামায়াত-শিবির-বিএনপির সন্ত্রাসী হামলায়’ আহতদের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (জুলাই ৩১) বিকাল ৫টায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজ-খবর নেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
গুরুতর আহতদের কষ্ট প্রত্যক্ষ করে এবং বর্বরতার কথা শুনে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
গত কয়েক দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-নিটর (পঙ্গু হাসপাতাল), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজ-খবর নেন। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক দিনে সাম্প্রতিক সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা পরিদর্শন করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরবর্তী কয়েক দিন সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ৩১ জুলাই ২০২৪