বাংলাদেশে তো সড়ক নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে খুব লজ্জাজনক। এদেশে চালকদের মান অত্যন্ত নিম্ন। প্রতিদিনই রাস্তায় মানুষ গাড়ি চাপা পড়ে মানুষ মরছে। তবে তারপরও সম্ভবত ভারতের এই গ্রামটির মতো নয়- আক্ষরিক অর্থেই গ্রামটি ‘বিধবার গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। গাড়ি চাপা পড়ে সব পুরুষ মরে গেছে!
তেলেঙ্গানার পেড্ডাকুন্তা গ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একটা বাইপাস রাস্তা। ২০০৬ সালে রাস্তাটি তৈরি হয়েছে। এ গ্রামে বাস ৩৫ পরিবারের। গোটা গ্রাম গরু খোঁজা করলেও পরিণত বয়স্কের পুরুষ মিলবে মাত্র একজন! তিনি ছাড়া আর কোনও পরিণত পুরুষ অবশিষ্ট নেই। আর নারীরা যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই স্বামীকে হারিয়েছেন। আছে বাবা হারানো সন্তান-সন্ততিরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রত্যেক পুরুষই মরা গেছেন রাস্তা পেরোতে গিয়ে।
কুরা আসলি নামে ২৩ বছরের এক তরুণী। এই বয়সেই তার বিধবার বেশ। বলেন, ‘আমার স্বামী মরেছেন পথ দুর্ঘটনায়, আমার ভাইও তাই, এমনকি বাবাও গাড়ির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান।’ এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন কুরা। হাতে ধরা স্বামীর ঝাপসা হয়ে আসা ছবি। গ্রামেরই আর এক নারী জানান, তার স্বামীর বাঁ-পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় অনেকটা সময় রাস্তায় পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি।
গ্রাম উজার হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয়রা এখন ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি তুলেছেন। অন্য বিধবাদের জন্য যেমন ভাতা আছে, এই গ্রামের বিধবাদের জন্যও তারা চান ভাতার সঙ্গে আয়ের পথ।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাদের দাবি কেউ কানেই তোলে না। মাঝে মাঝে সাংবাদিক ও সরকারি লোকেরা আসে, ছবি নেয়, তার পর চলে যায়। তাদের অবস্থার আর পরিবর্তন হয় না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। যানবাহন বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বড় কারণ বেহাল রাস্তা ও বেপরোয়া ড্রাইভিং। চালকের ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ না থাকাটাও একটা কারণ। পথনিরাপত্তা বাড়াতে সরকার অনেক কিছুই করছে। এই গ্রামের পরিবারগুলোর কথা একটু ভাববে কি?
|| আপডেট: ০৪:০৪ এএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৫, মঙ্গলবার
ডিএইচ/২০১৫।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur