Home / জাতীয় / ভোটের মাঠে থাকছেন কারা চূড়ান্ত হবে আজ
ভোটের

ভোটের মাঠে থাকছেন কারা চূড়ান্ত হবে আজ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে কারা থাকবেন তা চূড়ান্ত জানা যাবে আজ রবিবার। এদিন বিকাল ৪টার মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। কোন বৈধ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চাইলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যাহার করতে হবে। একইসময়ে কতটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচন অংশ নিচ্ছে তাও পরিস্কার হবে। প্রতীক বরাদ্দ শেষে আগামীকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হচ্ছে। নির্বাচনের ব্যালট পেপার ব্যতিত সব উপকরণ পাঠানো সম্পন্ন করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সুপারিশ নিয়ে আজ বেলা ১১টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।

বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল প্রত্যাখ্যান করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মিত্ররা নির্বাচনী তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে মনোনিবেশ করেছে। বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়েই ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত দিনে মনোনয়ন গ্রহণ শেষ করা হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে। আগামীকাল প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছেন মনোনয়ন বৈধ ও চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়েই নির্বাচনি ডামাঢোল অলি গলি আর মাঠে গড়াবে। যদিও এর আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম তোলা ও জমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অনানুষ্ঠানিক প্রচারনায় রয়েছেন। সভা-সমাবেশ ও মিটিং মিছিল করে যাচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শোকজও খেয়েছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিসহ প্রভাবশালী অনেক প্রার্থী। গতকালও কয়েকজনকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ি, এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনে ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র জমা হয়। মনোনয়নপত্র বাছাই চলে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা ৭৩১ জনের বাতিল ও ১ হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে ৫৬০টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। গত রবিবার থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার শেষ হয় এসব আপিল শুনানি। শুনানিতে মোট ২৮০ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। বাতিল করা হয়েছে বৈধ হওয়া ৫ প্রার্থীর মনোনয়ন। আর ২৭৫ জন প্রার্থীর আবেদন নামঞ্জুর করেছে কমিশন। আপিল না মঞ্জুর হওয়া প্রার্থীরা চাইলে হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন। ফলে আপাতত গতকাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ২ হাজার ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা নির্ধারিত হবে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় অন্যদলগুলোর কাছে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের। এ কারণে দলের বাড়তি চাপমুক্ত থাকতে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। আগামীকাল প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী মাঠ ঘাট চষে বেড়াবেন প্রার্থীরা। যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

যেভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৬ অনুচ্ছেদ বলা আছে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থী নিজে বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত লিখিত নোটিশের মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। দলীয় প্রার্থীর বেলাতেও একই বিধান। আর দলের ক্ষমতা হচ্ছে দল থেকে বা জোট থেকে যদি একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন বা তার আগে একজনকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন। সে ক্ষেত্রে অন্যদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আজ বিকাল ৪টার মধ্যে কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চাইলে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে তা করতে পারবেন।

ব্যালট ছাড়া ভোটের সব উপকরণ মাঠে: নির্বাচনের ব্যালট পেপার ব্যতিত সব উপকরণ পাঠানো সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল নয় ধরনের উপকরণ পাঠানো মধ্যে দিয়ে এ কাজটি সম্পন্ন হলো বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অমোচনীয় কালী, বিভিন্ন ধরনের ফরম ও প্যাকেট, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র এবং গাড়ির স্টিকার পাঠানো হয়েছে। এগুলো ছাড়াও ভোটগ্রহণের জন্য ১৩ ধরনের উপকরণের প্রয়োজন পড়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ও লক, বিভিন্ন ধরনের সিল, স্ট্যাম্প, সিল, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কাগজ, প্যাড, রশি প্রভৃতি। এগুলো গত নভেম্বরে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ব্যালট পেপার ছাপানো শুরু হবে। এবার আপিল শুনানি শেষে বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৬০ জন। এ সংখ্যা কিছুটা কমতে, বাড়তে পারে।

মাঠে থাকবেন সাড়ে ৭লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য: এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে সাত লাখ সদস্য। এর মধ্যে আনসার ৫ লাখ ১৬ হাজার, পুলিশ (র‍্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড ২ হাজার ৩৫৫ জন এবং বিজিবির সদস্য ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন নিয়োজিত থাকবেন। আর নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। তবে কতজন সদস্য মোতায়েন থাকবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভোট অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ইতিমধ্যেই দুইজন পুলিশ কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ও এসআইসহ সারাদেশে পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল করেছে নির্বাচন কমিশন।

বঙ্গভবনে যাচ্ছেন সিইসি: নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সুপারিশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ বেলা ১১ টায় বঙ্গভবনে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমও উপস্থিত থাকেবেন। ইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রার্থিতা বহাল রাখতে সিইসিকে গণতন্ত্রী পার্টির চিঠি: নিজেদের মধ্যে কোন্দলে বাতিল হওয়া সব প্রার্থীর প্রার্থিতা বহাল রেখে প্রতীক বরাদ্দের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি। গতকাল শনিবার নির্বাচন ভবনে দলটির একাংশের সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানান। সিইসিকে লেখা চিঠিতে শাহাদাত হোসেন বলেন, গণতন্ত্রী পার্টিকে আপনার কমিশন থেকে জানিয়েছেন যে, বিগত ২৫ জুলাই আমাদের দাখিলকৃত আবেদন ও কমিটি না-মঞ্জুর হয়েছে এবং নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। শুনানির জন্য ১৫ (পনের) দিনের সময় দিয়েছেন, আমরা শুনানি করতে ইচ্ছুক। যেহেতু এই ১৫ দিন সময়ের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়ে যাবে, সেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রী পার্টির যে সব প্রার্থীদের মনোনয়ন রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক বাছাই করে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করে প্রতীক বরাদ্দের জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে, সেই সব বৈধ প্রার্থীদের প্রার্থিতা বহাল রেখে প্রতীক বরাদ্দ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রী পার্টিকে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। এবারের নির্বাচনে দলটি ১২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। কোন্দলের কারণে তাদের সবার প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। একইসঙ্গে নিবন্ধন বাতিলের পদক্ষেপ হিসেবে দলটিকে শুনানিতে ডেকেছে কমিশন।

টাইমস ডেস্ক/ ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩