ফরিদগঞ্জে বিক্রয় কেন্দ্রে টিসিবি’র অপর্যাপ্ত পণ্য না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিতরণ কেন্দ্রে ডিলার উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা সেখানে গেলে পণ্য কম থাকার তথ্য প্রকাশ হয়। সরকারের ট্যাগ অফিসার পণ্য কম থাকার বিষয়ে জানতেন না মর্মে স্বীকার করেছেন। ইউএনও বলেছেন, আমি এ বিষয়ে পরবর্তীতে সভা করবো। ঘটনা ঘটেছে উপজেলার ৯নং গোবিন্দপুর (উত্তর) ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
সরেজমিন জানা গেছে, গোবিন্দপুর (উত্তর) ইউনিয়নে কার্ডধারী পণ্য ক্রেতা ১০৫৯ জন। বুধবার রাতে বিদ্যালয়ে পণ্য মওজুদ করা হয়। সকাল আট ঘটিকা হতে পণ্য বিক্রয় শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর পণ্য বিক্রয় শুরু হয়। এর মধ্যে গোপন সূত্রে সংবাদ রটে সেখানে পণ্য পর্যাপ্ত নেই। বেলা দুই ঘটিকায় সেখানে উপস্থিত হয়ে লোক জনের কাছ থেকে জানা যায় কয়েকজন শ্রমিক পণ্য বিতরণের কাজে নিয়োজিত আছেন। প্রশ্ন করা হলে ওই শ্রমিকরা জানান, ডিলার মোহাম্মদ রুবেল উপস্থিত হননি। তার প্রতিনিধি আছেন। প্রতিনিধির বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। মতলবের ওই ব্যক্তির নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যক্তি শ্রমিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পণ্য বিতরণস্থলে খুঁজে না পেয়ে জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, ট্যাগ অফিসার আশেপাশে আছেন।
ট্যাগ অফিসার ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমির হোসেন। কিছুক্ষণ পর তিনি পণ্য বিক্রয়স্থলে আসেন। প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিক্রয় শেষে আমি হিসেব বুঝে নেবো। তেল ও ডাল কম আনা হয়েছে কি না। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি জানি না। পরে তার সামনে ডাল এর খালি কার্টন গণনা করা হয়। এতে তিনি ৯৯০ বোতল (প্রতি বোতলে দুই লিটার) এর হিসাব পান। তেল কম কেনো।
এমন প্রশ্নে ডিলারের প্রতিনিধি পরিচয়ধারী ব্যক্তি ও কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি বলেন, তেল কম নেই। সমস্ত পণ্য পর্যাপ্ত আনা হয়েছে বলে ডিলারের প্রতিনিধি দাবী করেন। কার্টন গণনা করে হিসেব মিলিয়ে দিতে পারছেন না, কেনো। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় যাবত তিনি নানাভাবে বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছিলেন। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী প্রশ্ন-উত্তরের পর তিনি ও তার সাথে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, “ভাই, আমরা পর্যাপ্ত পণ্য এনেছি। সকালে টের পেয়েছি গভীর রাতে তেলের চারটি কার্টন চুরি হয়ে গেছে”। অন্যান্য পণ্য একইভাবে কম ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর মেলানো যায়নি। তবে, প্রতিনিধি দাবী করেছেন অন্য পণ্য কম নেই। এ সময় চালের বস্তা অনেক কম ছিলো। এ বিষয়ে তিনি দাবী করেন, ওই বস্তাগুলোতে পণ্য তুলে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে চালের বস্তা কম। ওই সময় মেঝেতে (ফ্লোরে) খোলা ডাল দেখা গেছে। কয়েকজন শ্রমিক ডাল পলিথিন ব্যাগজাত করছিলেন। বেলা সাড়ে তিন ঘটিকা পর্যন্ত একটি কক্ষের ভেতর অবিক্রিত পণ্য দেখা যায়।
ডিলারের প্রতিনিধির কাছে জানতে চাওয়া হয়, ডাল কম থাকার তথ্য প্রথমে অস্বীকার করার কারণ কি। এ বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেন নি। তিনি দাবী করেন, পণ্যের সাথে বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত লোক ছিলেন। বিশ^স্ত ব্যক্তি দাবী করেছেন, ডিলার মো. রুবেল ঢাকা থাকেন। তিনি সাধারণত পণ্য বিক্রয়স্থলে থাকেন না।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এর মাধ্যমে তার কক্ষে বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী ওছমান গণির কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, আমি গত রাতে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাতে এখানে কোনো প্রকার চুরির সংবাদ আমি শুনিনি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমুন নেছা বলেছেন, ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমের মাধ্যমে আমি সংবাদটি শুনেছি। কয়েকদিনের মধ্যে ডিলার, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভায় মিলিত হবো। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবো যাতে কোনো প্রকার অনিয়ম না হয়।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৫ আগস্ট ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur