ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামে তেলবাহী জাহাজ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চাঁদপুরের মাসুদুর রহমান বেলালের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মাসুদুর রহমান ওই জাহাজের মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর থেকে জাহাজের ৪ স্টাফের সাথে তিনিও নিঁখোজ রয়েছেন।
মাসুদ বেঁচে আছেন কি না সেটিও তার পরিবার জানতে পারছে না। তাকে জীবীত অবস্থায় দ্রুত উদ্ধারে শোকাহত পরিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।
নিঁখোজ মাসুদুর রহমান বেলাল ২ কন্যা সন্তানের জনক। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের বাগড়া বাজার সোবানপুর গ্রামের সাদিকুর রহমানের পুত্র। বর্তমানে তার পরিবার চাঁদপুর শহরের ছৈয়াল বাড়ি রোডে বসবাস করছেন।
নিঁখোজ মাসুদুর রহমান বেলালের বোন লতা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমার ভাই গতকাল সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দুপুর ১টা ৩৩ মিনিটে সময় বাড়িতে ফোন করে জানান, তিনি জাহাজে পৌঁছেছেন এবং নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খাবেন। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে সময় জাহাজে অবস্থান করা একজনের কাছ থেকে আমরা জাহাজটিতে বিস্ফোরণের খবর পাই। তারপর থেকে আমার ভাইয়ের কোন খোঁজ খবর পাচ্ছি না।’
লতা আরো জানান, এই খবর শোনার পর থেকে আমাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের সদস্যদের কান্না কিছুতেই থামছে না। আমরা সরকার এবং প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, উদ্ধারকাজ যেন দ্রুতভাবে সম্পন্ন করে এবং আমাদের ভাইকে আমরা জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে পারি।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই শনিবার দুপুর ২টার দিকে সুগন্ধা নদীতে ঝালকাঠি পৌর খেয়াঘাটের বিপরীত পাশে নোঙর করা অবস্থায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির তেল বোঝাই ‘সাগর নন্দিনী-২’ জাহাজে এই বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ওই জাহাজের ইঞ্জিনকক্ষের ওপরে থাকা মাস্টার ব্রিজটি পুরোপুরি ছিটকে নদীতে পড়ে যায়। তবে যে অংশে তেল রয়েছে, সেই অংশটি অক্ষত থাকায় নদীতে তেল ছড়িয়ে পরেনি। বিস্ফোরণের পর ওই জাহাজের ৯ জন কর্মীর মধ্যে ৪ জন নিখোঁজ ছিলেন। বাকি ৫ শ্রমিককে দগ্ধ অবস্থায় আহত হন। ২ জুলাই রোববার নিখোঁজদের মধ্যে আব্দুস সালাম হৃদয় নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে জাহাজের ইঞ্জিনরুম থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত হৃদয় জাহাজের গ্রিজারম্যান ছিলেন।
এদিকে এ ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির অপারেশন ম্যানেজারকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঝালকাঠি ফায়ার স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, ডুবুরি দল নদীর পানিতে জাহাজের ভাঙা অংশের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই এর নিচে কোনো লাশ আছে কিনা তা জানা যায়নি। রোববার দুপুরে জাহাজের ইঞ্জিন রুমের ভেতর থেকে হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ অব্যাহত আছে। তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া বিস্ফোরণের যথাযথ কারণ বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ভোলা দক্ষিণ জোনের লে. শাফায়াত জানান, ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণে জাহাজের নদীর ভেতরের অংশের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঐ অংশে কোনো লাশ আছে কিনা তা দেখা সম্ভব হয়নি। নদীতে অতিরিক্ত স্রোতের কারণে ডুবুরিদল প্রবেশ করতে পারছে না। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, জাহাজের ইঞ্জিন রুম থেকে যে লাশ পাওয়া গেছে তাকে শনাক্ত করেছে জাহাজের বাবুর্চি বেলায়েত হোসেন। দুর্ঘটনার পর আহত বাবুর্চি বেলায়েতকে পুলিশের সহায়তায় চিকিৎসা দিয়ে তাকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের লাশ শনাক্তের জন্য রাখা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজদের স্বজনরা কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের নভেম্বরে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ তেলবাহী জাহাজে দুর্ঘটনায় ৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যার তদন্ত প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২ জুলাই ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur