Home / বিশেষ সংবাদ / কাতার বিশ্বকাপে যা কিছু প্রথম
Quater

কাতার বিশ্বকাপে যা কিছু প্রথম

চার বছরের প্রতীক্ষার পর আবারও আবির্ভাব হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের। “দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ” খ্যাত ফিফা বিশ্বকাপের এবারের আসর বসছে কাতারে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোও একে একে চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করে ফেলছে।

কাতার বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে আর মাত্র চার দিন বাকি। বিভিন্ন দেশের ভক্ত-সমর্থকরাও এরই মধ্যে কাতারে পা রাখতে শুরু করেছেন। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে বিতর্ক আর সমালোচনা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। তবে দিনশেষে ফুটবল খেলাটির বৃহত্তর স্বার্থে এবারের ফিফা বিশ্বকাপ নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে বলেই প্রত্যাশা সবার।

গত ৯২ বছরে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১টি আসরের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। তবে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর যে বিভিন্ন দিক দিয়েই আলোচিত এবং ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে,সেটি না বলে দিলেও চলছে। ফিফা বিশ্বকাপের এবারের আসরে সবাই অনন্য এমন অনেক কিছুরই প্রত্যক্ষদর্শী হবে,যা বিগত আসরগুলোতে দেখা যায়নি।

বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে ক্ষুদ্রতম দেশ

টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ১৮ তম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে কাতার। আর এরই মধ্যে বিগত স্বাগতিকদের মধ্যে আয়তনের দিক থেকে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক হওয়ার রেকর্ড করেছে এশিয়ান দেশটি। কাতারের আয়তন মাত্র ১১ লাখ বর্গ কি.dm, যা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ১৩ গুণ ক্ষুদ্র। এত ক্ষুদ্র দেশ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ায় প্রভাব পড়েছে টুর্নামেন্ট আয়োজনের বিভিন্ন প্রস্তুতিতে।

বিশ্বকাপ ট্রফির পাশে কাতার বিশ্বকাপের বল আল রিহলা/টুইটার

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অধিকাংশ দল ১০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থান করবে। বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা একই হোটেলে থাকবে এবং একই ভেন্যুতে অনুশীলন করবে। ৩২ দলের ২৪টিই কাতারের রাজধানী দোহার কাছাকাছি একে অপরের থেকে কম দূরত্বের মধ্যে থাকবে। বাকি ৮টি দল দোহা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করবে। ফিফার ভাষ্যমতে, উরুগুয়েতে ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের পর কাতার বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে সবচেয়ে আঁটসাঁট বিশ্বকাপ।

আয়োজনের সময়

সাধারণত ফিফা বিশ্বকাপের বিগত আসরগুলো ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের মৌসুম শেষের বিরতিতে জুন-জুলাই মাসে আয়োজিত হয়েছে। কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের চলমান মৌসুমের মাঝপথে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতারে নামছে ফুটবলপ্রেমীদের ঢল

মূলত বছরের মাঝামাঝি ওই সময়টায় আয়োজক কাতারের অনেক জায়গার তাপমাত্রাই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে পৌঁছায়, যা ফুটবলার-দর্শক দুই পক্ষের জন্যই প্রতিকূল পরিস্থিতি আর পরিবেশের সৃষ্টি করতো। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রথমবারের মতো শীতকালীন বিশ্বকাপ উপভোগ করতে যাচ্ছে সবাই।

চূড়ান্ত স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি

দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানে অনুষ্ঠেয় ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে অংশগ্রহণকারী দলগুলো সর্বোচ্চ ২৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে থাকে। এর আগের আসরগুলোয় দলগুলো সর্বোচ্চ ২২ জন খেলোয়াড় সর্বশেষ স্কোয়াডে রাখতে পারতো। তবে আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলো নিজেদের স্কোয়াডে ২৬ জন খেলোয়াড় রাখতে পারবে।

কাতার বিশ্বকাপের ৩২ দল ব্লেচার রিপোর্ট ফুটবল

মূলত কাতারের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেয়া এবং ইউরোপীয় ফুটবলের মৌসুমের মাঝপথে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের কারণে যেন দলগুলো সমস্যায় না পড়ে, সেজন্যই এ পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। বিশ্বকাপ চালাকালে দলের সাইডবেঞ্চে ২৬ জনের বেশি (১৫ বদলি খেলোয়াড় এবং ১১ কর্মকর্তা—তাদের একজন অবশ্যই দলের চিকিৎসক) সদস্যকে বসতে দেওয়া হবে না।

বাড়তি বদলি খেলোয়াড়

শুধুমাত্র চূড়ান্ত স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যাই না, ম্যাচে বদলি খেলোয়াড়ের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় আয়োজিত সর্বশেষ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ পেতো দলগুলো। আর নকআউট পর্বে কোনো ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে আরও একজন খেলোয়াড় বদলি হিসেবে নামাতে পারতো দলগুলো।

কাতার বিশ্বকাপে প্রতিটি দলই নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মাঝে মোট পাঁচজন খেলোয়াড় বদলাতে পারবে/সংগৃহীত
কিন্তু আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে প্রতিটি দলই নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মাঝে মোট পাঁচজন খেলোয়াড় বদলাতে পারবে। সেই সঙ্গে নকআউট পর্বের ম্যাচগুলো অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে থাকছে আরও একজন খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগও। মূলত করোনাভাইরাসের পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পাঁচজন খেলোয়াড় পরিবর্তনের নিয়মটিতে ইতিবাচক ফলাফল আসায় বিশ্বকাপেও সেটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা।

সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি

নিখুঁত সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলের বিগত দুই আসরে প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল যুগান্তকারী। ব্রাজিলে আয়োজিত ২০১৪ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয়েছিল গোললাইন প্রযুক্তি। অন্যদিকে, রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় ২০১৮ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি (ভিএআর) ব্যবহার করা হয়। গোললাইন প্রযুক্তি আর ভিএআর তো থাকছেই, আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে থাকবে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি।

সেমি অটোমেটেড প্রযুক্তিতে অফসাইড নিরূপণ

অপটিক্যাল ট্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সেমি অটোমেটেড প্রযুক্তিতে অফসাইডের বাঁশি বাজাবেন রেফারিরা। ইনফ্রারেড মার্কারের মাধ্যমে মাঠের বিশেষ ক্যামেরাগুলো দিয়ে এ প্রযুক্তিতে ফুটবলার এবং বলের সঠিক অবস্থান জানা যাবে। মাঠে অবস্থানকারী প্রতিটি ফুটবলারের শরীরে ২৯টি জায়গা চিহ্নিত করে খেলোয়াড়েদের ত্রিমাত্রিক অবয়ব তৈরি করে রেফারিদের কাছে সেকেন্ডের মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করবে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি।

নারী রেফারি

কাতার বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন ৩৬ জন রেফারি। তাদের মধ্যে রয়েছেন তিন নারীও। ফলে টুর্নামেন্টের ৯২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো নারী রেফারিরা বিশ্বকাপের ম্যাচ পরিচালনা করতে যাচ্ছেন।

এ তিন নারী হলেন- ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্রাপার, জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতা ও রোয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা। এছাড়া, আরও তিনজন নারী বিশ্বকাপে সহকারী রেফারি হিসেবে থাকবেন। তারা হলেন- ব্রাজিলের নেওজা বাক, মেক্সিকোর কারেন ডিয়াজ মেডিনা ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিট।

১৬ নভেম্বর ২০২২
এজি