চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক | আপডেট: ০৩:০০ অপরাহ্ণ, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শুক্রবার
কেন আমরা এই ছবি প্রকাশ করছি? আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স প্রকাশিত ছবিটি শুধু কোনো শিশু লাশের নয় বলে মনে করি আমরা। যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতির মত মানবিক বিপর্যয়কে প্রতীকায়িত করেছে অসীম সংবাদমূল্যের এই ছবি।
তুরস্ক উপকূল থেকে উদ্ধার সিরিয়ার একটি শিশুর মৃতদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে; প্রশ্নের মুখে ফেলেছে ইউরোপীয় শরণার্থী নীতিকে।
টুইটার ও ফেইসবুকে #KiyiyaVuranInsanlik হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রতিবাদে মুখর দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের।
#KiyiyaVuranInsanlik কথাটির বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘মানবতা ভেসে গেল সাগরতীরে’।
ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তুরস্কের অন্যতম অবকাশ যাপন কেন্দ্র বোদরামের সৈকতে মুখ মাটির দিকে দিয়ে পড়ে আছে লাল টি-শার্ট আর নীল প্যান্ট পরা একটি শিশু।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, তিন বছর বয়সের এ শিশুটির নাম আয়লান কুর্দি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে সেদেশের হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে এখন ইউরোপের দিকে ছুটছে৷ এক্ষেত্রে তারা প্রথমে নৌকা করে সাগর পাড়ি দিয়ে তুরস্ক, কিংবা ইটালি ও গ্রিসে পৌঁছাচ্ছেন।
এমনই এক নৌকা গ্রিস ও তুরস্কের মাঝামাঝি সাগরে ডুবে গেলে ১২ জন সিরীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়। ছোট্ট শিশুটি তাদেরই একজন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্স ফারাহ খাতাব নামে একজন মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে শিশুটির মৃতদেহের ছবি টুইট করে লিখেছেন, “আমি দুঃখিত। মানবতা তোমাকে পরাজিত করেছে। বাকি বিশ্বের কাছে: এই হলো তোমাদের ‘অনাকাঙিক্ষত অভিবাসী’।”
ছবিটি প্রকাশ করার সময় তিনি #KiyiyaVuranInsanlik হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন।
আলিয়া সাউদ নামে একজন টুইটারে লেখেন, “সব শিশু একইভাবে পৃথিবীতে জন্ম নিলেও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের কারণে সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পায় না।”
ছবিটি টুইট করে কে ব্রাট নামে একজন লিখেছেন, “মানবতা ধুয়ে গেছে সাগরের তীরে। বিশ্বের উচিৎ কাঁদা। কিন্তু এখনও তা হয়নি।”
ছবিটি ফেইসবুকে শেয়ার করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, “এই শিশুটির জন্য কোনো মানবতা নেই! এই শিশুদের জন্য মানবাধিকার নেই। এই শিশুদের জন্য জাতিসংঘ নেই। কী অপরাধ এই শিশুটির? হতভাগ্য মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণই কি তার একমাত্র অপরাধ?”
“শেম! শেম!! শেম!!! তোমাদের এই একচক্ষু মানবতা আমায় লজ্জিত করে। তোমরা কি বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়াও না কখনো?”
ব্রুনো টাবাল নামে একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, “সিরিয়ার যুদ্ধ বন্ধ কর, আমরা ইউরোপে যেতে চাই না।”
ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শিশুর মৃতদেহের ছবি প্রকাশ প্রচলিত সম্পাদকীয় রীতি বহির্ভূত হলেও বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যমের প্রায় সবাই ছবিটি প্রকাশ করেছে।
বিবিসি শিরোনাম করেছে, ‘অভিবাসী সংকট: ডুবে যাওয়া বালকের ছবিতে হৈ চৈ’।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সাগর পারে একটি শিশুর ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর তুরস্ক ও এর বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে #KiyiyaVuranInsanlik বিশ্বব্যাপী টুইটারে শীর্ষ ট্রেন্ডিং।
জার্মানির সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে লিখেছে, সাগর তীরে উদ্বাস্তু শিশুর ছবি বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল লিখেছে, ‘মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষুদ্রতম বলি’; এবিপি নিউজ লিখেছে, ‘সিরিয়ার ডুবে যাওয়া বালকের ছবিতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ’।
ভারতের ইন্ডিয়া টুডে শিরোনাম করেছে, ‘ডুবে যাওয়া সিরিয়ার বালকের ছবি ইউরোপের উদ্বাস্তুভীতিকে নির্দেশ করছে’।
ইতালির ‘লা রিপাবলিকা’ পত্রিকায় ছবিটির শিরোনাম ছিল, ‘এক ছবিতে স্তব্ধ বিশ্ব’; দ্য অস্ট্রেলিয়ান শিরোনাম করেছে, ‘অভিবাসী সংকটের ট্রাজিক প্রতীক’।
ছবিটি প্রকাশ করা প্রসঙ্গে ডয়েচে ভেলের প্রধান সম্পাদক আলেকজান্ডার কুডাশেফ বলেছেন, “আমরা এ ছবিটি প্রকাশ করেছি কোনো সংবেদনবাদ বা আমাদের পেইজে বেশি ক্লিক পেতে নয়।
“আমরা এটি প্রকাশ করেছি এই জন্য যে এটি আমাদের সকলকে ছুঁয়ে গেছে। আমরা এটি প্রচার করছি কারণ এটি উদ্বাস্তু সমস্যার প্রতীক। সুন্দর একটি ভবিষ্যতের জন্য এ নিষ্পাপ শিশুটির বাবা-মা তাকে একটি ভয়ংকর সমুদ্রযাত্রায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, যে যাত্রাটির মর্মান্তিক সমাপ্তি হয়েছে সাগরে।”
ছবিটি প্রকাশ হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে আরও কয়েক হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৈকতে পড়ে থাকা শিশুর মৃতদেহের ছবিটি দেখে ক্যামেরন বলেন, “আমাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করবে যুক্তরাজ্য”।
ওই ছবি প্রকাশের পর সিরীয় শরণার্থীদের নিয়ে জনমতে যে পরিবর্তন এসেছে তা-ই ক্যামেরনকে এ বিষয়ে ‘উদ্যোগী করেছে’ বলে ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur