চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ম্যাজিক কী শুধুই বিনোদন? না। কারও কারও কাছে ম্যাজিক একটি শিল্প, কারও জন্য এটাই জীবন। আর ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে সামান্য ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে নিজের প্রাণ খুইয়েছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে অনেক। পড়ুন এই সব ম্যাজিশিয়ানের কথা, ম্যাজিক কেড়ে নিয়েছে যাদের প্রাণ।
১) “কার” ক্র্যাশ
সাউথ আফ্রিকার চার্লস রোয়ান, যার ছদ্মনাম ছিলো “কার দ্যা মিস্টেরিয়াস”, ছিলেন অদম্য সাহসি এক ম্যাজিশিয়ান। ১৯২০ এবং ৩০ এর দশকে তিনি এমন সব দুঃসাহসিক স্টান্ট দেখাতেন যাতে শিউরে উঠতো দর্শকের শরীর। এসকেপ আর্টিস্ট হিসেবে সুখ্যাতি ছিলো তার। একবার তিনি এমন এক স্টান্ট দেখানোর পরিকল্পনা করেন যা শুনতেও অসম্ভব মনে হবে। স্ট্রেইটজ্যাকেটে আটকানো অবস্থায় তাকে পথের মাঝে ফেলে রাখা হবে। ঠিক তার দিকে ধাবমান হবে একটি গাড়ি, ঘণ্টায় ৪৫ মাইলেরও বেশি বেগে। ১৫ সেকেন্ডের মাঝে মুক্ত হয়ে গাড়ির পথ থেকে সরে যেতে হবে তাকে। শেষমেশ দেখা যায়, ১৫ মিনিটের মাঝে সরে যেতে পারেননি তিনি। একঝাঁক মানুষের সামনে গাড়িটি তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। সাথে সাথে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে, একটি পা কেটে বাদও দিতে হয়। তারপরেও শেষ রক্ষা হয় না। হাসপাতালে মারা যাবার আগে ওই গাড়ির ড্রাইভারকে দায়মুক্ত করে যান কার।
২) ফাঁকা গুলি
ম্যাজিশিয়ানদের দেখানো ভেলকিগুলোর মাঝে অন্যতম বিপজ্জনক হলো ফাঁকা গুলি করা। দর্শক দেখে মনে করে ম্যাজিশিয়ানকে গুলি করার পরেও তিনি সেই গুলি ধরে ফেলছেন, রয়ে যাচ্ছেন অক্ষত। আসল ঘটনা হলো, আসলে ম্যাজিশিয়ানের কাছে একটি গুলি আগে থেকেই থাকে এবং বন্দুকে ভরা থাকে ফাঁকা কার্তুজ। কিন্তু এই ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে নিতান্তই সাধারণ ভুলে আহত এবং নিহত হনে ১৫ জনেরও বেশি ম্যাজিশিয়ান। তার মাঝে বিখ্যাত হলো জার্মানিতে ১৮২০ এর নভেম্বরে ম্যাজিশিয়ানের স্ত্রী মাদাম ডেলিন্সকির মৃত্যু। ৬ জনের একটি ফায়ারিং স্কোয়াড থেকে তাকে গুলি করার কথা এবং এর প্রতিটি গুলিই তার “থামিয়ে” দেবার কথা। কিন্তু একজন সৈনিক ভুলে ফাঁকা কার্তুজের বদলে আসল কার্তুজ ভরে ফেলে রাইফেলে। স্টেজে গুলি চলার সাথে সাথে আর্তনাদ করে ওঠেন মাদাম ডেলিন্সকি। পেটে গুলি লেগে ২ দিন পর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শোকে পাগল হয়ে যান তার ম্যাজিশিয়ান স্বামী।
৩) ব্ল্যাক হারম্যানের নিজস্ব গোরস্থান
বেঞ্জামিন রুকার ছিলেন একজন আফ্রিকান আমেরিকান ইল্যুশনিস্ট। অর্থাৎ চোখের ধাঁধাঁ তৈরি করতে ওস্তাদ ছিলেন তিনি। ব্ল্যাক হারম্যান নামে নিজের মতো আফ্রিকান আমেরিকান মানুষদের জাদু দেখাতেন তিনি। বলতেন এটা হলো জুলু গোত্রের মানুষের শেখানো খাঁটি ম্যাজিক। তার জনপ্রিয় একটি ট্রিক ছিলো জ্যান্ত সমাহিত হওয়া। এর মাধ্যমে তিনি দাবি করতেন তিনি এবং মোজেসের বংশধর তিনি। ব্ল্যাক হারম্যানের নিজস্ব গোরস্থান নামের এক জায়গায় তাকে কবর দেওয়া হতো। ৩ দিন পর একই জায়গা থেকে আবার উঠে আসতেন তিনি। ১৯৩৪ সালের এপ্রিলে তিনি যখন আসলেই একটি শো এর পর হঠাৎ মারা যান, কেউ এতে বিশ্বাস করেনি। সবাই ভাবে এটাও একটি ম্যাজিক ট্রিক।
৪) সিমেন্টের কবর
জোসেফ বার্স, যার ছদ্মনাম ছিলো অ্যামেজিং জো, সারা জীবন হুডিনির মতো অসাধারণ ম্যাজিশিয়ান হবার স্বপ্ন দেখতেন। হ্যারি হুডিনিও যা করার সাহস পাননি, সেই ট্রিক দেখানোর খেয়াল চাপে তার মাথায়। ১৯৯২ সালের হ্যালোউইনের রাত্রে নিজেকে আটকে ফেলেন একটি কাঠের কফিনে। এই কফিন মাটির ৭ ফুট নিচে কবর দেওয়া হয়। এর ওপর ঢেলে দেওয়া হয় মাটি এবগ্ন সিমেন্ট। বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন ফুরিয়ে আসার আগেই সেই কফিন থেকে বের হয়ে মাটি খুঁড়ে বের হয়ে আসতে হবে ম্যাজিশিয়ানকে। এতোটা সময় কী তিনি পেয়েছিলেন? না। ওপরের সিমেন্ট আর মাটির চাপে ভেঙে যায় তার কফিন। এর ভারে মৃত্যু হয় তার। আক্ষরিক অর্থেই জীবন্ত কবর যাকে বলে।
৫) ময়নাতদন্ত
সম্মোহনবিদ্যা জাদুবিদ্যারও এক রহস্যময় অধ্যায়। ওয়াশিংটন আরভিন বিশপের বাবা ছিলেন একজন মিডিয়াম, যে কিনা আত্মার সাথে কথা বলতে পারার দাবি করতো। তিনি বিশ্বাস করতেন না এসব ট্রিক্সে। তিনি নিজেই এক সাইকিক এর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করেন যাতে এসব ধোঁকাবাজির ব্যাপারে হাটে হাঁড়ি ভাংতে পারেন। কিন্তু এ সময়ে তার মাঝে পরিবর্তন আসে। একটা সময়ে তিনি নিজেই জেনে যান সব রহস্য। এরপর মানুষের মুখ ও অঙ্গভঙ্গি দেখে কী ভাবছেন, এসব বলে দিতে পারতেন তিনি। এ ব্যাপারে নিজেই হয়ে ওঠেন এক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু নিজের দর্শকদের কাছে আগেই বলে নিতেন, তার কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই। ১৮৮৯ সালে তিনি স্টেজে পারফর্মেন্সের সময়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এরপর আবার জেগে উঠে পারফর্মেন্স শেষ করেন। এর পর আবার অজ্ঞান হয়ে যান ও আর জেগে ওঠেন না তিনি। কেউ কেউ ধারণা করে তিনি আসলে মারা যাননি। বরং অন্যান্য মিডিয়ামদের মতো ধ্যানের একটি পর্যায়ে চলে গেছিলেন। তার মা দাবি করেন এই ধ্যানে থাকার সময়ে ময়নাতদন্ত করার ফলেই মৃত্যু হয় তার।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur