Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ২০
ধান

ফরিদগঞ্জে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ২০

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সেচ স্কিমের ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ গুরতর আহত হয়েছে। আহতদের কেউ কেউ ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়।  

গত শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার ৩নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের পূর্ব মনতলা ও ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গুয়াটোবা দুই ইউনিয়নের গ্রামবাসীর মধ্যে এ সংঘের্ষর ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ৫ মে বৃহস্পতিবার ডোমরা পাটোয়ারি বাড়ির মৃত ফজলুল হক পাটোয়ারীর ছেলে সেচ স্কিমের ম্যানেজার শফিকুর রহমানের ধান কেটে নেয় গুয়াটোবা  তালুকদার বাড়ীর সালেহ আহমেদ। এতে পানি সেচ স্কিমেরর ম্যানেজার শফিক জমিতে ধান না পেয়ে গুয়াটোবা দোকানের কাছে এসে জমির মালিক সালেহ আহমেদের কাছে এর কারন জানতে গিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এক প্রকার তালুকদার বাড়ীর কিছু বিপদগামী লোক উত্তেজিত হয়ে উঠে। ঘটনার দিন রাতে স্কিম ম্যানেজারের খোজে তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলে দোকানে অবস্থানরত পাশ্ববর্তী মনতলা জমদ্দার বাড়ীর কয়েকজন মিলে তাদের বাধাঁ দেওয়ার চেষ্টা করে।  তাদেরকে কথা না শুনে ধাক্কা দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের ছোট ভাই হান্নান তালুকদারের নেতৃত্বে প্রায় ১৫/২০ জন যুবক স্কিম ম্যানেজারের বাড়ীতে গিয়ে  বসতঘরে হামলা ও লুটতারাজ চালায়।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে পরের দিন শুক্রবার রাতে ক্ষতিগ্রস্তের বাড়ীর বাসিন্ধা মন্টু পাটোয়ারির বসত ঘরে গ্রাম্য সালিশ বসে। সেই বৈঠকে ক্ষতিগ্রস্ত স্কিম ম্যানেজার পাশ্ববর্তী  মনতলা জমদ্দার বাড়ীর কিছু লোককে সালিশদার হিসাবে নিলে প্রতিপক্ষ লোকজন তাদেরকে দাওয়া করে।

এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে দাওয়া পাল্টা দাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়।

পরের দিন শনিবার প্রতিপক্ষের লোকজন মনতলা বাজার যাওয়ার পথে বাধাঁ হয়ে দাড়ায়। এ খবর পেয়ে গুয়াটোবা তালুকদার বাড়ীর ইউপি সদস্য কামাল হোসেন, তার ভাই হান্নান, স্বপন তালুকদার, শাহাজান, মহন, পিন্টু, এমরান তালুকদারসহ হাজীগঞ্জ ও রামগঞ্জ উপজেলা থেকে কিছু ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে মনতলা জমদ্দার বাড়ীতে হামলা চালায়। দফায় দফায় হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়।

মনতলা জমদ্দার বাড়ীর আহতরা হলেন, আ. রহিমের ছেলে কবির হোসেন (২৪), বিল্লাল জমদ্দারের ছেলে মো. শিপন (২৬), হারুন জমদ্দারের শিশু কন্যা হাবিবা (৮), দুলাল হোসেনের ছেলে ভূট্রো (২২), বিল্লাল হোসেন সর্দারের ছেলে কামাল হোসেন (৩৪), আ. রহিমের ছেলে মামুন (২৫), মৃত জাহাঙ্গীর এর স্ত্রী পারভিন বেগম (৪৫),  হারুনের স্ত্রী মাকসুদা বেগম (২৮)।

গুয়াটোবা তালুকদার বাড়ীর আহতরা হলেন, মো. মোস্তফা (৭৫), মাকসুদ তালুকদার ১৮),  হারুন কালুকদার (৫০) ও শাহাজান তালুকদার (৫৫)।
গুয়াটোবা লোকদের আঘাতে মনতলা জমদ্দার বাড়ীর হারুন, জাহাঙ্গীর,  আলমগীর, আমিনের ঘর হামলা ও ভাংচুর হয়।

মনতলা জমদ্দার বাড়ীর স্থানীয় দোকান্দার ফারুক হোসেন বলেন, শনিবার বিকালে তালুকদার বাড়ীর অর্ধশত লোকের উপস্থিতিতে একাধিক মোটরসাইকেল যোগে প্রায় ২০/৩০ জন হেমলেট পড়া সন্ত্রাসী ইট পাটকেল মারতে থাকে। আমি শুধু দোকানের ঝাপ পেলে চলে যাই। পরে দেখি সব রনক্ষেত্র করে চলে যায়।

জমদ্দার বাড়ীর মুরব্বি শাহজান মিয়া বলেন, এ ঘটনার জন্য দায়ী গুয়াটোবার মেম্বার কামাল হোসেন। সে ও তার ভাই হান্নান তালুকদারের নেতৃত্বে গত তিন ধরে এলাকা দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে।

মূল ঘটনা নিয়ে সেচ স্কিম ম্যানেজার শফিকুর রহমান বলেন, তালুকদার বাড়ীর খলিফার ছেলে হান্নানের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন লোক গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আমার বসত ঘরে  হামলা চালায়। এতে মোবাইল,  স্বর্ণের চেইন এবং আমার মেয়েদের উপর হামলা চালায়। আমি মাঠে যাইতে পারছিনা। ধানের খলায় যেতে দিচ্ছে না। এতে আমার প্রায় ৩ শ মণ ধান নষ্টের পথে। আমি প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

প্রথম দিনের ঘটনার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তালুকদার বাড়ীর সালেহ আহমেদের সাথে ধান কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় দোকানে থাকা নুর হোসেন দর্জি, খোকা পাটোয়ারি,  আবুল বাশার,  সামছুল আলম জমদ্দার, মোস্তফা জমদ্দারসহ ১০/১২ জন তালুকদার বাড়ীর লোকজনকে বাধাঁ দেয়। তাদেরকে উপেক্ষা করে পরবর্তী ঘটনা গুলো ঘটেছে।

এ বিষয়ে ৫নং গুপ্টি পূৃর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি প্রশাসনকে অবহিত করি। পরে পুলিশ এসে উভয় পক্ষের লোকজনকে শান্ত থাকার আহবান জানান। দুই ইউনিয়নের মধ্যে পক্ষ বিপক্ষ পড়ায় বিষয়টি থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে আমিও সমাধান চাই।

মনতলা এলাকায় হামলার বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা এ ঘটনাটির বিষয়ে অবগত নই, উক্ত হামলার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৯ মে ২০২২