ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর তীরের একটি বন্দরে যে বাংলাদেশি জাহাজটি ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ আটকে পড়েছিল, সেই জাহাজে রকেট হামলায় একজন বাংলাদেশি নাবিক মারা গেছেন।
রকেট হামলায় জাহাজটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল, কিন্তু জাহাজের ক্রুরা দ্রুত সেই আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন।
বাংলাদেশের নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলার কাদির কল্লোলকে জানিয়েছেন, কৃষ্ণ সাগরের অলভিয়া বন্দরে এই জাহাজটিতে রকেট হামলা হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা গেছেন।
বাংলার সমৃদ্ধি নামের এই জাহাজটি ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেখানে আটকে পড়ে।
মাত্র দুদিন আগে জাহাজের একজন নাবিক বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশে ফিরে আসার জন্য তাদের তীব্র আকুতির কথা জানিয়েছিলেন।
বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটির মালিক বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।
গত ২৬শে জানুয়ারি এটি ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে যাত্রা করে এবং তুরস্কের ইরেগলি হয়ে ২২শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছায়।
জাহাজটি বন্দরে পৌঁছানোর পরদিন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হয়।
জাহাজটি ইউক্রেন থেকে সিরামিক ক্লে নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরে যাবার কথা ছিল।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের নির্বাহী পরিচালক পীযূষ দত্ত বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, জাহাজটি ২৩শে ফেব্রুয়ারি অলভিয়া বন্দর ছেড়ে আসার কথা ছিল।
তিনি বলেছিলেন, “কিন্তু এর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা শুরু হয়ে যায়, তখন আমরা জাহাজটিকে কোনো পণ্য না নিয়েই বন্দর ছেড়ে চলে আসতে বলি।
কিন্তু যেখানে জাহাজটি নোঙ্গর করেছে সেখান থেকে মূল সাগরে আসতে অন্তত ৬০ নটিক্যাল মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে, এবং স্থানীয় পাইলট ( পথনির্দেশক ) ছাড়া সেটি করা সম্ভব নয়।”
বাংলাদেশের নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি বলেন, জাহাজের বাকী ২৮ জন ক্রুর সবাই অক্ষত আছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন এবং তারা এখনো জাহাজে আছেন।
জাহাজের ক্যাপ্টেনকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে, তারা জাহাজে থাকবেন, নাকি বেরিয়ে যাবেন।
তবে জাহাজ থেকে বেরিয়ে গেলে খাদ্য সংকট এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে , সেজন্যে আপাতত জাহাজেই তারা থাকছেন বলে জানা গেছে।
দেশে ফেরার আকুতি
ইউক্রেনের বন্দরে আটকে পড়া বাংলার সমৃদ্ধির একজন নাবিকের সঙ্গে বিবিসি বাংলার কথা হয় দুদিন আগে।
তখন তিনি দেশে ফেরার তীব্র আকুতির কথা জানিয়েছিলেন।
আতিকুর রহমান মুন্না বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৯ জন নাবিকের একজন।
বিবিসি বাংলার শাহনেওয়াজ রকির সঙ্গে তার কথা হয় ফেসবুকের ফ্রি মেসেঞ্জার সার্ভিসের মাধ্যমে।
কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করতে জানালেন, দুশ্চিন্তায় আছেন।
কারণ তিনি জানেন না কবে এই আটকে পড়া দশা থেকে মুক্তি পাবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত থাকায় বহির্বিশ্বের খবর খুব একটা পাচ্ছেন না। যুদ্ধের বিস্তারিত খুব কমই জানতে পারছেন।
তবে আশপাশে যুদ্ধবিমান উড়তে দেখেছেন তিনি। যেদিন যুদ্ধ বেধেছে প্রথম, সেদিন আকাশ থেকে বোমা ফেলতে দেখেছেন।
যে বন্দরে আটকা পড়েছেন তারা, সেই অলভিয়ার আশপাশে রবিবার তারা অনেক বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন।
এসব কারণে তাদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন মি. রহমান।
তিনি জানান, শিপিং কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও ক্যাপ্টেনের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে , কিন্তু কীভাবে এই অবস্থা থেকে মুক্ত হবেন তা এখনও জানেন না।
বিবিসির শাহনেওয়াজ রকিকে মি. রহমান আরো বলেন, জাহাজে যে খাবার মজুদ আছে তা দিয়ে সব ক্রুর ৪০ দিন পর্যন্ত টিকে থাকা সম্ভব হবে, খাবার পানি আছে প্রায় ১০০ টনের বেশি, তাই আপাতত খাবার ও পানি নিয়ে চিন্তা করছেন না। যত দুশ্চিন্তা দেশে ফিরতে পারবেন তো?
সীমিত ইন্টারনেট সংযোগের কারণে তার সঙ্গে খুব বেশি আলাপ করা সম্ভব হয়নি।
তবে বিদায়ের আগে তিনি আকুতি জানান, “দেশে ফিরতে চাই”।