Home / জাতীয় / অর্থনীতি / ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়াচ্ছে কারা
চালের

ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়াচ্ছে কারা

দেশের বাজারে গত এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার বাদামতলী ও বাবুবাজারের চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে ৫৮ টাকা কেজির মিনিকেট চাল এখন ৬০ টাকা, ৫৪-৫৫ টাকার মিনিকেট এখন ৫৭-৫৮ টাকায়, ৬০-৬৪ টাকার নাজিরশাইল ৬৪-৬৮ টাকায় এবং ৪৫ টাকার লতা চাল এখন ৪৬-৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, আমন ধানের ভরা মৌসুমেও কেন বাড়ছে চালের দাম?

সংশ্লিষ্টরা জানান, চালের বাজারের নিয়ন্ত্রণ বরাবরই অটোরাইস মিলারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এ বাজারে পা রেখেছে দেশের বড় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী। প্রত্যেক মৌসুমের শুরুতে মিলার এবং বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুত করে ফেলে। এসব ধান-চালই বছরজুড়ে বিক্রি হয়। চাহিদার বড় অংশের মজুত এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকায় বাজারে চালের দামও ওঠে-নামে তাদের মর্জিমতো। এসব প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তেই আমন ও বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রশিদ অ্যাগ্রো, দাদা, এরফান, মোজাম্মেল, গাজী অটোরাইস এবং শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে আকিজ, সিটি, এসিআই, ভিওলা, রুপচাঁদা, বসুন্ধরা, প্রাণ, এসিআই, স্কয়ারসহ কয়েকটি কোম্পানি চালের ব্যবসা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাণ ও সিটি গ্রুপের চালের মিল আছে। তবে আকিজ গ্রুপ বিভিন্ন মিল থেকে চাল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠান বছরের শুরুতে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুত রাখছে এবং সারা বছরই তা বিক্রি করছে।

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, সরকারের নানা প্রণোদনার কারণে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। কয়েকটি শিল্পগ্রুপের কারণে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। ১২-১৩টি শিল্পগ্রুপ এখন চালের ব্যবসায় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশের নিজস্ব মিল নেই। তারা বাজার থেকে চাল কিনে সারা বছর নিজস্ব ব্র্যান্ডের ব্যবসা করছে। বাজার ওঠানামার পেছনে মূলত এদের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে।

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের মেসার্স নিউ মুক্তা রাইস এজেন্সির মালিক দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন বলেন, অটোরাইস মিলে দৈনিক ২-৩ হাজার টন ধানের প্রয়োজন হয়। এদের বিপুল পরিমাণ পুঁজি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছার কারণে চালের দাম কমছে না।

এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চালের বাজারে আগে ছোট মিলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে ধারা নেই। এখন অটোমিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সে দামেই বাজারে চাল বিক্রি হচ্ছে। এর প্রতিকারে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে চালের মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আমন মৌসুমে ভালো আবহাওয়ার কারণে কৃষকেরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। এ কারণে অবস্থাসম্পন্ন কৃষকেরা ধান মজুত করেছেন। চলতি মৌসুমে ধানের দাম না কমায় চালের দাম বাড়তি। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে ধারণা তাঁদের।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রোববার পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৫৭-৬৬ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫৫-৬৬ টাকা। আর খুচরা বাজারে তা ৬২-৭০ টাকা বিক্রি হয়েছে। একইভাবে পাইকারির ৪২-৪৬ টাকার মাঝারি চাল ৪২-৪৭ টাকা এবং খুচরায় ৪৮-৫২ টাকা এবং ৩৯-৪৩ টাকার মোটা চাল পাইকারিতে ৪১-৪৩ টাকায় এবং খুচরায় ৪৪-৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।