চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক (আর্কাইভ নিউজ)
মৃত্যু হয়নি তারপরেও কাফনের কাপড় পরে গত তিনদিন যাবৎ জীবনের অনিশ্চয়তা নিয়ে সাড়ে তিন হাত কবরের নিচে বসবাস করছিলেন পেয়ারা বেগম (৩০) নামে এক নারী। তাকে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে জীবিত কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। (২৮ অক্টোবর ২০১৪) বিকাল ৫টার দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসানের উদ্যোগে পেয়রা বেগমকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
অষ্টগ্রাম উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন জানান, জীবনে প্রথমবার এমন আজব কথা শুনে আমি ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলাম কবর থেকে তাকে উত্তোলন করতে। পরে পুলিশ গিয়ে ঔই নারীকে উত্তোলন করেছে। তিনি আরো বলেন, কথিত এক পীর কামরুল হাসানের নির্দেশে গত মঙ্গলবারসহ (২৮ অক্টোবর) তিন দিন নিয়ে আগামী আরো সাতদিন কবরে অবস্থান করার কথা ছিল।
পেয়ার বেগম বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের রতানি গ্রামের বাসিন্দা মধু মিয়ার স্ত্রী। পেয়েরা বেগমের স্বামী মধু মিয়া পীর কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পীরের আদেশেই সব হচ্ছে। পেয়ারা পীরকে খুব বিশ্বাস করেন। পীর কামরুল হাসানের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার গোডামবাড়ি গ্রামে। মধু মিয়া আরো বলেন,আজ বিকালে অষ্টগ্রাম থানার পুলিশ ফোর্স এসে আমার স্ত্রীর আল্লাহর আশেকের ধ্যান বন্ধ করে দিয়েছে এবং কবর থেকে তুলে দিয়েছে।
তাহলে কি কারণে আপনার স্ত্রী কবরে বসবাস করছিলেন প্রশ্ন করা হলে, পেয়ারা বেগমের স্বামী মধু মিয়া বলেন, পেয়ারা পীরের নির্দেশই এমন কাজ করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ইফতারের সময় ছোট্ট একটি পাইপ দিয়ে খাবার হিসেবে শুধু ২৫০ গ্রাম দুধ খেতে দিয়েছি। গত মহরমের ১০দিন পীরের নির্দেশ দিয়েছিল আগুনের তৈরি কোন জিনিস খাওয়ানো যাবে না, তাই শুধু ফলমূল খেতে দিয়েছি।
কবরে বসবাস করলেও খাবারের জন্য একটি ছোট্ট পাইপ প্রবেশ করার মত ছিদ্র রাখা হয়েছে, সেই ছিদ্র দিয়েই নারীকে প্রতিদিন ইফতারের সময় দুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে।এ বিষয়ে কথিত পীর কামরুল হাসানের (২৫) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি পেয়ারা বেগমকে বলে দিয়েছি মহরমের দশদিন কবরের নিচে থাকার জন্য। প্রতিদিন ইফতারের সময় ২৫০ গ্রাম দুধও খেতে হবে।
কি জন্য কবরের নিচে থাকতে বলেছেন এমন প্রশ্নে কথিত পীর কামরুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে আপনি জেনে কি করবেন? আর সব কথা সবাইকে বলা যায় না। পেয়ারা বেগমকে জীবতাবস্থায় কেন কাফনের কাপড় পড়তে বলেছেন, এ ব্যাপারে কথিত পীর বলেন, আমি জয়নাল আবেদীন” নবীর বংশধর, আমি যা বলি তাই ঠিক। আপনার পেশা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহ যা করায় আমি তাই করি। কথিত পীর কামরুল হাসানের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার গোডামবাড়ি গ্রামে।
এ বিষয়ে বাঙ্গালপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক অলি জানান, অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রশাসন এসে একটা মানুষের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান জানান, এ কুসংস্কারাছন্নতার বিষয়টি জানার পর আমাদের পুলিশ ফোর্স গিয়ে এ আজব ঘটনার অবসান ঘটিয়েছে এবং ঔ নারী সুস্থ আছে