তখন বৃষ্টিবিঘ্নত দুপুর। চাঁদপুরের শাহরাস্তি মেহের ডিগ্রি কলেজে সমবেত ২শতাধিক দরিদ্র এবং নিম্নমধ্যবিত্ত অসহায় মানুষ। ভাগ্যহত পরিবারের এই অভিভাবকরা এসেছেন পুলিশের মানবিক সহায়তার জন্য। চাঁদপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোন সম্ভাবনা নেই।
থেমে থেমে বৃষ্টি চলতে থাকায় চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ নির্দশ দেন, একজন মানুষও যাতে বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট না পায়। প্রয়োজনে তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। কলেজ ভবনে তাদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।
এরপর বৃষ্টি কিছুটা কমে এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় খাদ্য সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম। কিন্তু সহায়তা নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষই বয়স্ক, প্রতিবন্ধী আর নারী। চাল, ডাল, তেল, নুনসহ নানারকম কাচা পণ্যের এতো বড় বস্তাটি বহন করার শক্তি-সামর্থ তাদের অনেকেরই নেই।
এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন সেখানে দায়িত্বরত বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তারা পুলিশ সুপারের দৃষ্টির বাইরে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী আর নারীদের গ্রহণ করা মানবিক সহায়তার বস্তাগুলো নিজেরাই কাধে তুলে নেন। এমন দেখাদেখিতে হাতে, কাধে করে বস্তা বহন শুরু করেন, থানার অন্যান্য সকল অফিসার থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও। তারা লাইন ধরে খাদ্য সহায়তার বস্তাগুলো মাথায়, কাধে, হাতে বহন করে অনেক দূর পায়ে হেঁটে রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
এদিকে মঞ্চের সামনের জটলা কমে গেলে অনুষ্ঠানস্থলে বসে বিষয়টি উপলব্ধি করেন প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
এমন দৃশ্যে উপস্থিত সকলেই দারুণভাবে মুগ্ধ হন। সংবাদ সংগ্রহে আসা গণমাধ্যমকর্মীরা ছুটে গিয়ে দৃশ্যগুলো ক্যামেরাবন্দি করেন।
এসময় উপস্থিত সকলেই শাহরাস্তি থানা তথা চাঁদপুর জেলা পুলিশের এমন মানবিকতাকে ব্যপক প্রশংসা করেন। সহায়তা নিতে আসা অনেক নারী-পুরুষকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এমন-ই মানবিক পুলিশ চাই। যারা যতটা না কঠোে হবেন, তার চেয়ে বেশি মানবিক হবে।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রামক রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর শাডডাউনে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকটা ঘরবন্দী হয়ে আটকে আছে তাদের জীবন। কিন্তু জীবিকা না থাকলে জীবনও যে চলে না। আর জীবন চালানোর জন্য জীবিকার সন্ধানে বের হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তাই সরাকারি সহযোগীতার পাশাপাশি এমনসব ভাগ্যহত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে চাঁদপুরের জেলা পুলিশ।
লকডাউনে যেসবল অসহায় পরিবার কোন মাধ্যম থেকে সহযোগীতা পায়নি, তাদের খুঁজে খুঁজে চাল, ডাল, তেল, নুনসহ প্রায় ১০ দিনের খাদ্য সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিয়োছে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ পিপিএম। এ কর্মসূচির আওতায় ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার শাহরাস্তি উপজেলায় ২ শতাধিক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রথান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ পিপিএম, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, কচুয়া- শাহরাস্তির সার্কেল এএসপি আবুল কালাম চৌধুরী, মেহের ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী।
এদিকে মানকিক সহায়তার পাশাপাশি একই সঙ্গে লকডাউন কার্যকর রাখা, সচেতনতা বৃদ্ধি, অপরাধ দমনেও কাজ করে যাচ্ছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ। করোনাকালে জেলা পুলিশের এই মানবিকতা এখন প্রশংসা কুড়াচ্ছে চাঁদপুজুড়ে। মানবিকতার এমন মানসিকতা ধরে রাখলে ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই স্লোগান বাস্তবে রূপ নেবে- এমনটা মনে করছে সচেতন মহল।
লেখক : আশিক বিন রহিম, সাহিত্য ও সংবাদকর্মী। সাধারণ সম্পাদক সাহিত্য মঞ্চ, চাঁদপুর।