সংবাদপত্রের সম্পাদনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সংবাদকর্মীদের মেধা, মনন ও শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে প্রতিদিনই প্রকাশিত হয় একটি সংবাদপত্র। সংবাদপত্রকে বলা হয় রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ । জ্ঞানের ভান্ডার। আবার বলা হয় সভ্যতার অগ্রদূত ও সৃজনশীল প্রতিভাধর সমাজের সম্মানিত ব্যাক্তি।
বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ দিবসটি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ইউনেস্কো দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির জানান দেয় আগে থেকেই। প্রতি বছর একটি করে প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে।
এবার বিশ্ব গণমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ জনসাধারণের কল্যাণে তথ্য ’(Information as a Public Good.)জনসাধারণের মঙ্গল হিসাবে তথ্যকে লালন করার গুরুত্বকে নিশ্চিত করার এবং সাংবাদিকতা জোরদার করার জন্য ব্যবহার সামগ্রীর উৎপাদন, বিতরণ এবং সংবর্ধনা প্রভৃতি বিষয়ে অনুসন্ধান করার আহ্বান হিসাবে কাজ করা এবং কাউকে পিছনে না রেখে স্বচ্ছতা ও ক্ষমতায়নের অগ্রগতি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা ।
থিমটি বিশ্বজুড়ে সমস্ত দেশের জরুরি ও প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হচ্ছে। এটি আমাদের স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলছে এমন পরিবর্তনশীল যোগাযোগ ব্যবস্থাটিকে স্বীকৃতি দেয়। সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করে। এসব আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি পেরিয়ে যায়। দিবসটি প্রতিবছর আসে-যায়।
প্রতিবছর ৩ মে বিশ্বজুড়ে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’(World Press Freedom Day ) বা মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করা হয়্। বাংলাদেশেও সাংবাদিক সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থা এ উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। একটি সংবাদপত্রে দেশ ও জাতির সকল বিষয়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সংবাদপত্র প্রকাশের স্বাধীনতা যতটুকু রয়েছে। ততটুকুতেই দেশের নাগরিকদের মতামত প্রকাশে সুযোগও রয়েছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মৌলিক আদর্শগুলো চিহ্নিত করে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত আফ্রিকার নামিবিয়ায় উইন্ডোহয়েক শহরে ইউনেস্কো ও ইউএনডিপিআই এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ডিক্লারেশন অব উইন্ডোহয়েক ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘৩ মে বিশ^ প্রেস স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। সংবাদপত্রই প্রথম সৃষ্টি করেছে সভ্যতার উন্নয়নের উত্তাল ঢেউ। বাংলাদেশ বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির দেশ হিসেবে এগিয়ে চলছে। ধীরে ধীরে এর ধাপ আরো বৃদ্ধি পাবে। শিল্প, শিক্ষা,সাহিত্য,সংস্কৃতি সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির নীতি গ্রহণ করা হয়। সংবাদপত্র শিল্পেও এটি চলে আসছে। বৈশ্বয়িক করোনা কালেও সংবাদত্র ও সাংবাদিক বন্ধ ুগণ থেমে নেই। দেশের প্রিন্টিং, ইলেকট্রনিস্কস ও অনলাইন মিডিয়াগুলো বিরামহীন গতিতে তাদের সংবাদ দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরছে ।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে দৃষ্টিপাত করা যাক আমরা কোথায় দাঁড়িয়েছে। এ দিবসটির প্রাক্কালে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো প্রতি বছরের মতো গণমাধ্যমের স্বাধীনতার একটি বৈশ্বিকসূচকও প্রকাশ করে থাকে।
আমাদের দেশে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীন ১৯৬২ সালে কলা অনুষদে ডিপ্লোমা- ইন-জার্নালিজম নামে একটি কোর্স চালু হয়েছিল। স্বাধীনতার পর এ কোর্সটি বন্ধ করে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। ১৯৮০ দশকে সব পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে এবং ১৯৯০ দশকে প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। বলা যায় – যার হাওয়ায় আমাদের দেশে সংবাদপত্রের বিকাশ লাভ করে আসছে।
২০০০ সালে এসে সম্পৃক্ত হয় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কম্পিউটার। বর্তমান সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৪ সালে সংবাদপত্রকে শিল্প বলে ঘোষণা দিয়েছেন-যা সংবাদপত্রের জগতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচ্য। ২০০০ সালের আগে দেশের সংবাদপত্রগুলো মুদ্রণশিল্পের মাধ্যেমে প্রকাশিত। শিসা বা তামা কিংবা লোহার ধাতব পদার্থের মাধ্যমে বাংলা ভাষা প্রতিটি বর্ণ বসিয়ে বসিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে সংবাদপত্র ছাপানো হতো। যা ছিল ধৈর্য ও কায়িক শ্রমের বহি:প্রকাশ।
বর্তমানে এর পরিবর্তে স্বল্প সময়ে,কম্পিউটার কম্পোজে, পেস্টিং করে দ্রুততম সময়ে অটোমেটিক বৈদ্যুৎতিক ছাপাখানার মাধ্যেমে বর্তমানে সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে খুব অল্প সময়ে দেশের যে কোনো স্থান থেকে ই-মেইল করে সংবাদ প্রেরণ একটি মাইলফলক উম্মুক্ত হয়। শুধু তাই নয়- ভিডিওতে দৃশ্য ধারণ করেও সংবাদ প্রাণবন্ত করে তোলা হচ্ছে পাঠকের কাছে। এর কারিগর হলো আমাদের সাংবাদিকবন্ধুগণ।
সাংবাদিকরন্ধুগণ দিনের পর দিন অবাধ তথ্য প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার জ্ঞান অর্জন করে সংবাদপত্র অতি আধুনিক পদ্ধতিতে বের করতে সহায়তা করছে। যার ফলে যে কোনো সংবাদ, বিষয়,ছবি ও সংশ্লিষ্ট পেক্ষাপটগুলো খুবই চমৎকার ও শিল্প নৈপুণ্যের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে।
প্রতিবেদক: আবদুল গণি, ০২ মে, ২০২১;