চাঁদপুর শহরেরব পুরানবাজারে পূর্ব জাফরাবাদ, পূর্ব রামদাসদী, রঘুনাথপুর এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীকে একবেলা রান্না করে তিনবেলা খেতে হয়। গ্যাস সংকটে যথাসময়ে রান্না করতে না পারায় এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল না পেয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এসব এলাকায় বসবাসরত প্রায় আড়াইশ’ পরিবার ১ বছর যাবত গ্যাস সংকটে এমন মহাভোগান্তিতে রয়েছেন।
সরেজমিন গিয়ে উল্লেখিত এলাকার গাজী বাড়ি, রহমান গাজী বাড়ি, কয়াল বাড়ি, হাছান ছৈয়াল বাড়ি, জলিল বেপারী বাড়ি, খালেক গাজীর বাড়ি, বাসু মিজি বাড়ি, আলম মোল্লার বাড়িসহ বেস কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে গ্যাসের চুলায় এই অবস্থা দেখা যায়।
গ্যাস সংকটের কারণে কেউ কেউ এলপি গ্যাস কিনে ব্যবহার করছেন। এতে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। আর হতদরিদ্রের রান্না করতে হচ্ছে লাকড়ির চুলায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পৌর ৩ নং ওয়ার্ডের পূর্ব জাফরাবাদের প্রায় তিন থেকে চারশ পরিবার এক বছর ধরে গ্যাসের প্রেসারের সমস্যায় সময়মত রান্নাবান্না করতে পারছে না। ভোরে গ্যাস চলে যায়। সারা দিন গ্যাসের দেখা মেলে না। রাত ১০টার পর থেকে হালকা প্রেসার থাকলেও ওই গ্যাসে রান্না করা যায় না।
পূর্ব জাফরাবাদ গাজী বাড়ির গৃহবধূ মারজানা বেগম জানান, আমাদের ঘরে গ্যাসের চুলা আছে গ্যাস নেই। রাত ১০টার দিকে কিছু গ্যাস আসে, ১/২ ঘন্টা থেকে আবার ফুরিয়ে যায়। এরপর আবার ভোর ৪টার সময় গ্যাস আসে ৬টার আগেই ফুরিয়ে যায়। দিনের সময়টাতে বেশিরভার সময় গ্যাস থাকে না। কোন কোন দিন থাকলেও কুপির অাগুণের চেয়েও কম আগুন থাকে। তখন চুলা ধরাতে গিয়ে ম্যাচের কাঠি জ্বলে শেষ হয়ে গেলেও চুলা জ্বলে না।
তাই বাধ্য হয়ে রাতের বেলা না ঘুমিয়ে রান্না করতে হয়। অনেক সময় অতিকষ্টে লাকড়ি ব্যবহার করেও রান্না করতে হচ্ছে। একবার রান্না করে তিনবার খাই। অনেক সময় পান্তা ভাতই খেয়ে থাকি। অথচ মাস পার হলেই গ্যাসের চুলার জন্য টাকা গুনতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় সংসারে জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। গ্যাসহীন এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে, এই এলাকায় আর বসবাস করা যাবে না।
একই অভিযোগ করে, গৃহবধূ রিনা বেগম, আছিয়া বেগম, মনোয়ারা বেগম বলেন, এই শীতের সময়ে রাতের বেলা রান্না করতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। বেশি সমস্যা হয়, শিশু বাচ্চার মায়েদের বেলায়।
একই এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল গাজী (৬০), আব্দুল জলিল বেপারী (৬২), সেলিম গাজী (৫০), কাশেম গাজী, শাহাজান গাজীসহ বেশ কয়েবজন বলেন, গত ১ বছর ধরে গ্যাসের সমস্যায় আমরা ভোগান্তি পোহাচ্ছি।
এই বিষয়ে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষরতা সহ বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, জেলা প্রশাসক এবং পৌর মেয়রে হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাশাপা গ্যাসের এমন সঙ্কট তৈরী করে বোতল গ্যাস বিক্রি করতে এটি কোনো প্রতারণার ফাঁদ কি না, সেটিও যাতে ক্ষতিয়ে দেখা হয়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন বিক্রয় ও বিতরণ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মহিবুর রহমান জানান,
এই সমস্যা কেবল পুরানবাজারের জাফরাবাদেই নয়, শহরের অনেক এলাকাতে এমনকি আমি যে কোড়ালিয়ায় বসবাস করছি। সেখানেও পিক আওয়ারে গ্যাসে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে এমনকি প্রকাশিত পত্রিকা পেপার কাটিংসহ প্রেরণ করা হয়েছে।
কুমিল্লা ইতিমধ্যে ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে কাজ করানোর জন্য একটি কাজের টেন্ডার হয়েছে। আগামি দেড় মাসের মধ্যে সেই কাজ হলে এ সংকট অনেকাংশেই কমে যাবে।
প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,৮ ডিসেম্বর ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur