ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক রূপান্তরের পাশাপাশি জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। মাস্টারকার্ড গতকাল সোমবার টাফটস ইউনিভার্সিটির দ্য ফ্লেচার স্কুলের সঙ্গে অংশীদারির মাধ্যমে ডিজিটাল ইনটেলিজেন্স ইনডেক্স (ডিআইআই) বা ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা সূচক প্রকাশ করেছে।
বিশ্বের ৯০ দেশের ডিজিটাল ইভলিউশন বা প্রযুক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে ১৬০টি নির্দেশক মূল্যায়ন করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এর মধ্যে চারটি প্রধান স্তম্ভ হলো : প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ, চাহিদার অবস্থা, সরবরাহব্যবস্থা এবং উদ্ভাবন ও পরিবর্তনের সক্ষমতা।
এতে ডিজিটাল অগ্রগতি বিবেচনায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। স্ট্যান্ড আউট, স্ট্যাল আউট, ব্রেক আউট এবং ওয়াচ আউট। এতে ব্রেক আউট বা উদীয়মান অর্থনীতির অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উঠে আসে। এই তালিকায় আরো রয়েছে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর স্কোর নিম্নপর্যায়ের হলেও অর্থনৈতিক গতিময়তায় দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। ফলে এই দেশগুলো বিনিয়োগকারী ও উদ্ভাবকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। দেশগুলো ডিজিটাইজেশন ও প্রযুক্তিগত সাফল্যে অনেক আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটাচ্ছে। যদিও তুলনামূলকভাবে অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অনেকটা দুর্বল। এই দেশগুলো ভবিষ্যতে ভালো করার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা স্ট্যান্ড আউট অর্থনীতিও হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ, কেনিয়া, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনাসহ আরো কিছু দেশের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার অনেক দেশের জন্য রোল মডেল হয়ে উঠেছে। ওই দেশগুলো দেখছে কিভাবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান প্রযুক্তি খাতে অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। লকডাউনের মধ্যেও চলতি ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। এসব দেশের প্রযুক্তি খাতে প্রচুর মেধাবী কর্মী যেমন পাওয়া যায় তেমনি শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যে ব্যাপকভাবে সক্রিয় আরঅ্যান্ডডি কোলাবোরেশন বা যৌথ উদ্যোগও রয়েছে। ডিজিটাল পণ্য উদ্ভাবন ও তা মূলধারায় সরবরাহের ক্ষেত্রেও এসব দেশের রেকর্ড ভালো।
টাফটস ইউনিভার্সিটির দ্য ফ্লেচার স্কুলের গ্লোবাল বিজনেস অনুষদের ডিন ভাস্কর চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশ্বে ডিজিটাইজেশন বা প্রযুক্তির প্রচলন বৃদ্ধির জন্য চলমান মহামারিই সম্ভবত একটি সত্যিকারের পরীক্ষা। প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতিতে গতিশীল হয়ে ওঠা দেশগুলো কিভাবে নজিরবিহীন অনিশ্চয়তার পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে এবং তাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পরিবর্তন ত্বরান্বিত হতে পারে সেই সম্পর্কে আমাদের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি এখন পরিষ্কার।’
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ অনলাইন সেবার আওতায় রয়েছে। আমরা এখন ‘আফটার অ্যাকসেস’ বা ডিজিটাল সুবিধা পাওয়ার পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করছি, যেখানে নিছক সুবিধা পাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। এখন ডিজিটাল কমপিটিটিভনেস বা প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতাশীলতা ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে টেকসই করে তোলার জন্য মানসম্পন্ন ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা, প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার, দায়বদ্ধ বা জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, তথ্য-উপাত্তসংক্রান্ত বলিষ্ঠ নীতিমালা এবং আস্থা সৃষ্টি এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। এ বছরের ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা সূচকের দুটি উপাদান হলো : ডিজিটাল ইভলিউশন বা প্রযুক্তির বিকাশ ও ডিজিটাল ট্রাস্ট বা প্রযুক্তির প্রতি আস্থা বৃদ্ধি। প্রযুক্তির বিকাশ একটি দেশের অর্থনীতিতে ঐতিহাসিক বিবর্তনের সূচনা করে। অর্থাৎ ফিজিক্যাল বা ভৌত অতীত থেকে ডিজিটাল বা প্রযুক্তি বর্তমানে যাত্রা শুরু করে। অন্যদিকে প্রযুক্তির প্রতি আস্থা এর যাত্রা বা প্রচলনকে বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রযুক্তিভিত্তিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেয়।(তথ্যসুত্র:কালোর কন্ঠ)
বার্তাকক্ষ, ০৮ ডিসেম্বর,২০২০;