আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে নেই কোন চক্ষু চিকিৎসক। যার কারণে গত ৬ বছর ধরে হাসপাতালটিতে চক্ষু চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেনা সাধারণ রোগীরা।
জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে হাসপাতালের চোখের ডাক্তারের পদটি শূন্য হয়ে পড়ে আছে।৬ বছর আগে ওই পদে দায়িত্বে থাকা ডাঃ মনোজ কান্তি বড়ুয়া চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে সে পদটি আজও শূন্য পড়ে রয়েছে। আর স্বাস্থ্যসেবায় এই গুরুত্বপূর্ন পদটি শূন্য থাকায় চোখের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষজন।
সরজমিনে দেখা গেছে,প্রতিদিনই জেলার এই সরকারি হাসপাতালটিতে চোখের চিকিৎসাসেবা নেয়ার জন্য চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বহু রোগী হাসপাতালে যান। কিন্তু চোখের ডাক্তার না থাকায় তারা সেই সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ব্যর্থ মনে ফিরে যেতে হচ্ছে।
ডাঃ মনোজ কান্তি বড়ুয়া অবসর নেয়ার পর থেকেই এ পদে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি বলে জানা গেছে। তাই সে চক্ষু চিকিৎসক শূন্য পদেই চলছে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসাসেবা।
এছাড়া আরও বেশ কিছু পদ শূন্য পড়ে আছে বলে জানা গেছে। শুধু চক্ষু চিকিৎসকই নয়, এর পাশাপাশি প্রায় দেড় বছরের মতো বন্ধ রয়েছে আল্টাসনোগ্রাম বিভাগটিও।
আরও পড়ুন…. চিকিৎসক সংকটে আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগটি দেড় বছর যাবৎ বন্ধ : রোগীদের ভোগান্তি
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,ওই বিভাগটিতে রেডিওলজিস্ট ও কনসালটেন্ট পদে দু’ চিকিৎসক কর্মরত ছিল। তাদের পদোন্নতি হওয়ার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালের নিচ তলায় অবস্থিত আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগটির কার্যক্রম সম্পন্ন বন্ধ হয়ে যায়।
এর মধ্যে আল্টাসনোগ্রাম বিভাগটির দায়িত্বে থাকা রেডিওলজিস্ট ডা. সফিকুল ইসলাম গত ৫ মে ২০১৬ পদোন্নতি লাভ করে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তারপর থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগটির কার্যক্রম পরিচালনা করেন হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মানুুদ্দিন।
তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর পদোন্নতি লাভ করে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। এতে করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের এ দুটি পদই শূন্য হয়ে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়।
এতে হাসপাতালে এসে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। বিভিন্ন রোগের রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালে এসে অল্প খরচে যে সেবা পেতো জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীরা। এখন এ বিভাগটি বন্ধ থাকায় সেটাও পাচ্ছে না সাধারণ মানুষজন। যার ফলে জেলার বিভিন্ন স্থান ও জেলার বাইরে থেকে আসা রোগীদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
সরকারি নিদিষ্ট খরচে হাসপাতালে আল্টাসনোগ্রাম করাতে না পেরে অধিক খরচ দিয়েই বাধ্যতামূলক ভাবে বাহিরের ডায়াগনস্টিক গুলোতে আল্টাসনোগ্রাম করাচ্ছেন রোগীরা। এর জন্যও রোগীদের ওই পরীক্ষাটি করাতে হাসপাতাল থেকে অন্য স্থানে আসা যাওয়ায় অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, গত এক দেড় বছর পূর্বে একজন চক্ষু চিকিৎসক নিয়োগ হলেও কয়েক মাস পর তিনিও পদোন্নতি লাভ কওে অন্যস্থানে চলে যান। এ কারণে আজও শূন্য রয়েছে সরকারি এ হাসপাতালটির চক্ষু বিশেষজ্ঞ পদটি।
এদিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগটিই নয়, চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আরো বেশ কিছু চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। কনসালন্টেট ও রেডিওলজিস্টের পাশাপাশি দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চক্ষু চিকিৎসকের পদটিও শূন্য পড়ে আছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডাঃ হাবিব উল করিম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদটির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমরা একাধিক বার লিখিত ভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। এ পদে বিশেষজ্ঞ না পাওয়ার কারনে উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষও এই পদে কোন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে পারছেন না।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সুজাউদৌলা রুবেল চাঁদপুর টাইমসকে জানান, সরকারি হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা রেডিওলোজিস্ট সনোগ্রাফী বিশেষজ্ঞ ডাঃ সালাউদ্দিন পাটওয়ারী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যাওয়ার পরপরই আমরা এই পদে লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও এই পদে লোক নিয়েগের চেষ্টা করছে। কিন্তু রেডিওলজিস্ট,কনসালন্টেট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না পাওয়ার কারনে আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগটি বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনে আমরা আবারো এ পদে লোক নিয়েগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আবেদন করবো।
প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি,৮ ডিসেম্বর ২০২০