Home / কৃষি ও গবাদি / চাঁদপুরে ৭শ মে.টন ইরি-বোরা বীজ বরাদ্দ
Agriculture....
প্রতীকী ছবি

চাঁদপুরে ৭শ মে.টন ইরি-বোরা বীজ বরাদ্দ

দেশের কৃষি অধিদপ্তর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ৭শ মে.টন ইরি-বোরো ও ৩১৫ কেজি শাক-সবজি বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই চাঁদপুর বীজ বিপনন কেন্দ্রে বরাদ্দকৃত বীজ পৌঁছেছে ।

চাঁদপুর খামারবাড়ি কৃষিসম্প্রারণ কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত বীজ সরবরাহ কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিচালক মো.খায়রুল বাসার রোববার ২৫ অক্টোবর দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন ।

প্রাপ্ত তথ্য মতে,কৃষি অধিদপ্তর থেকে চাঁদপুর জেলার খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ৮ উপজেলায় ৭শ মে.টন ইরি-বোরোর বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো:বিআর ২৮,২৯ ও ৫৮।

জেলার কৃষি বিভাগের অনুমোদিত ১শ’২৩ জন ডিলারের মাধ্যমে তা’স্ব স্ব কৃষকগণের নিকট সরবরাহ করা হবে। ডিলারগণ উম্মুক্তভাবে তা সরকারি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করবে। বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজির বীজ বরাদ্দ রয়েছে ৩১৫ কেজি।

সহকারী উপ-পরিচালক মো.খায়রুল বাসার বলেন, ‘ সরকারি বিধি মোতাবেক বীজ বিতরণ কার্যক্রম চলমান। কৃষক ডিলারের কাছ থেকে এ বীজ কিনতে পারবে । আবার সরাসারি এ বীজ কেন্দ্র থেকেও নিতে পারবে।’

১০ কেজি’র মান ঘোষিত ১ প্যাকেটের মূল্য যথাক্রমে ৫৫০ টাকা, ৪৮০ টাকা ও ৪৯০ টাকা । সুগন্ধির মূল্য ৫৮০ টাকা,হাইব্রিড ১ কেজির মূল্য ২২৫ টাকা সরকারি মূল্য নির্ধারিত রয়েছে।

চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬শ ৯ মে.টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

হাইব্রিড,স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬শ’৯ মে.টন চাল।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৫১ হাজার ৭শ ৭৬ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪.১০ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ২শ’২৮ মে.টন।

হাইব্রিড ৮ হাজার ৫শ ৫১ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪.৯৫ মে.টন উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ৩শ’২৭ মে.টন ।

চাঁদপুররে ৮ উপজলোয় ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২০২০-২১ র্অথবছরে ২৪৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সোনালী, অগ্রণী ,জনতা ও কৃষি ব্যাংকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংকের এক তথ্যে জানা গেছে ।

প্রসঙ্গত, চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ূ কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। মেঘনা, ডাকাতিয়া,মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত এ চাঁদপুর। চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙ্গনগ্রস্থ ,নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি।

এ ছাড়াও মেঘনার পশ্চিমতীরে রয়েছে ১১টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল ও বেশ কটি এলাকা। এ এলাকার প্রায় ৩ লাখ অধিবাসী সরাসরি কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। ধান,গম, আলু,পাট,আখ,ভূট্টা,পেঁয়াজ,রসুন,তিল,মুগ-মুসারি, মিষ্টি আলু,সোয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দুটি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা- চাঁদপুর সদর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ২৩ হাজার ৩ শ’৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দু টোতে। জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন।

প্রতি বছর গড়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ ২২ মে.টন। এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪টি কৃষিব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়ে থাকে।

ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ ২২ মে.টন। চাঁদপুরে ১২ টি হিমাগার ও ১টি বীজভান্ডার রয়েছে । যাতে ৬০ হাজার মে.টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি আলু সংরক্ষণে আলুচাষীদের কৃত্রিম প্রযুক্তি দেয় কৃষিবিভাগ।

চাঁদপুরের সব উপজেলাতে কম-বেশি হারে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। নৌ-পথ,সড়কপথ ও রেলপথ থাকায় যে কোনো কৃষিপণ্য চাঁদপুর থেকে যে কোনো জেলায় আমদানি-রফতানি করা সহজ।

মতলব ব্রিজ,চাঁদপুর-রায়পুর ব্রিজ,চাঁদপুর পুরাণবাজার ব্রিজ ও হাজীগঞ্জ–রামগঞ্জ ব্রিজ, ফরিদগঞ্জ, সদরের এমএ ওয়াদুদ ব্রিজ ইত্যাদি ব্রিজগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। সড়ক পথের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সকল উপজেলায় রয়েছে আধুনিক খাদ্যগুদাম।

দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ,সেচ সুবিধা,সার ও বিদ্যুৎ ভর্তূকি,উন্নতমানের বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহী। জলবায়ূ পরিবর্তনে ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশাবাদী ।

আবদুল গনি,২৬ অক্টোবর ২০২০