স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট :
ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংকে অনুপ্রেরণা হিসেবে চাইলে মানতে পারেন প্রায় এক বছর পর দলে ফেরা সোহাগ গাজী। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেকেই সেঞ্চুরি এবং হ্যাটট্রিক করে যে ইতিহাস রচনা করেছেন; এমন রেকর্ড আর কোনো ক্রিকেটার ভাঙতে পারবে কিনা, এই ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। পটুয়াখালীর ছেলে সোহাগ গাজী তার অভিষেক ম্যাচ থেকেই প্রেরণা খুঁজে নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংকে দেখেছেন কীভাবে ফিরে আসতে হয়। তা থেকেও অনুপ্রাণিত বাংলাদেশের এই স্পিনার।
বুধবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি টোয়েন্টি২০ ম্যাচের দল ঘোষণা করেছে। সেই দলে সুযোগ পেয়েছেন অভিষেকেই কীর্তি গড়া সোহাগ গাজী।
ভারতীয় হরভজনের সঙ্গে বাংলাদেশের সোহাগ গাজীর কিছুটা মিল রয়েছে। তা হল তাদের বোলিং অ্যাকশন। তারা দু’জনই ডানহাতি অফব্রেক বোলার। দু’জনেরই আর্ম বলটাই মূল অস্ত্র। ভারতীয় এই বোলার বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬৪ রান খরচায় নিয়েছিলেন ৩টি উইকেট। আর তাতেই জিম্বাবুয়ে সিরিজের টিকিট পেয়েছেন হরভজন।
তবে কি সেই পথেই হাঁটছেন সোহাগ গাজী! এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কিছুটা সময় তো অপেক্ষা করতেই হবে সোহাগ গাজীর ভক্তদের। সোহাগ অবশ্য দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। টোয়েন্টি২০ স্কোয়াডে রয়েছি। এখানে যদি ভাল খেলতে পারি, অন্য ফরম্যাটের ম্যাচগুলোতে হয়তো সুযোগ মিলবে। হরভজন ভাল বোলার, সেও নিজেকে প্রমাণ করে দলে সুযোগ করে নিয়েছে। আমার এমন চেষ্টাই থাকবে। এখন জাতীয় দলটা অনেক ভাল খেলছে। এখানে পারফরম্যান্স করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। আমি আমার শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করব।’
গত বছর বিশ্বকাপে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টোয়েন্টি২০ ম্যাচে খেলেছিলেন এই ডানহাতি অফস্পিনার। অবশ্য ওয়ানডে খেলেছিলেন আগস্টে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপরই অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের খড়গ মাথায় নিয়ে দলের বাইরে চলে যান তিনি। বোলিং অ্যাকশনের ত্রুটি সারিয়েও দলে ফিরতে পারেননি এই স্পিনার। শেষ অবধি ৫ তারিখ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সিরিজের টোয়েন্টি২০ ফরম্যাটে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কেমন লাগছে- এ প্রশ্নে সোহাগ গাজী বলেছেন, ‘এতদিন পর দলে ফেরাটা অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। পরিশ্রম সফল হয়েছে এই সুযোগে। এখন নতুন চ্যালেঞ্জ দলে আগের জায়গাটা পাকাপোক্ত করা। একাদশে সুযোগ পেলে নির্বাচকদের প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করব।’
প্রায় এক বছর দলের বাইরে ছিলেন। নিশ্চয়ই টিমমেট ও ড্রেসিংরুমকে মিস করেছেন। এই মিস করার পরিমাণটা কতটা ছিল- এ প্রশ্নে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘আমি দুই বছরের মতো জাতীয় দলে খেলেছি। ড্রেসিংরুমটা আমার কাছে অনেক পরিচিত। আসলে জাতীয় দলের বাইরে থাকা কত কষ্টের; এটা দলের বাইরে যারা চলে যায় কেবল তারা বোঝে। তবে একটা গ্যাপের পর ড্রেসিংরুমে যেতে কিছুটা অস্বস্তিকরও লাগে। আশা করব, সবাই আমাকে ভালভাবেই গ্রহণ করবে।’
গত ৭ দিন ধরেই একাডেমিতে অনুশীলন করেছেন। এ ছাড়া এইচপির সঙ্গে অনুশীলনের অংশ ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আপনি থাকছেন, টিম ম্যানেজমেন্টের এমন পরিকল্পা আগে থেকেই জানতেন কিনা- এ প্রশ্নে সোহাগ গাজী দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘না, আসলে আমি জানতাম না। আমি শুধু আমার কাজগুলোই করছিলাম। সত্যি কথা বলতে, এখনো অনেক প্রতিযোগিতা। আমি সব সময়ের জন্যই প্রস্তুত ছিলাম। দল ঘোষণার পরই মূলত জানতে পারি যে, দলে আমি রয়েছি।’
অভিষেকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন। আর তাতেই তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন। এখন এগুলো মিস করেন কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘আমি খুব মিস করি। আমাকে মানুষ যেভাবে চিনেছিল; আবারও সেই তারকা খ্যাতি পেতে চাই। সবাইকে জানাতে চাই আমি ফুরিয়ে যাইনি। আমি এখনো ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। এর জন্য আমি অনেক পরিশ্রমও করেছি। স্পিনারদের জন্য বিরতি নেওয়ার পর ফিরে আসাটা খুব কঠিন। হঠাৎ করে চাইলে সেখানে ফেরা যায় না। এ জন্য সব সময় অনুশীলনের চেষ্টা করতাম। এ জন্যই স্টেডিয়ামের কাছাকাছি বাসা নিয়ে থেকেছি যেন সুযোগ পেলে স্টেডিয়ামে যেতে পারি, অনুশীলন করতে পারি।’
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছি আলাদাভাবে। সেঞ্চুরির ওই রেকর্ডের কথা মনে তো সব সময়ই পড়ে। আবার চেষ্টা করব সুযোগ পেলে এমনই কিছু করার। অভিষেকের ওই অর্জন আমাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে ভাল খেলতে।’
সোহাগ গাজীর মূল অস্ত্র আর্মবল। এই অস্ত্র ব্যবহার করেই তিনি বেশিরভাগ উইকেট নিয়েছেন। বোলিং অ্যাকশন ত্রুটি সারানোর পর এই অস্ত্রে কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমার এই অস্ত্রটা আরও ধারালো হয়েছে। ওই অস্ত্রটা ব্যবহার করে আমি জাতীয় লিগ, প্রিমিয়ার লিগেও উইকেট পেয়েছি। আমার ফ্লাইট ইমপ্রুভ হয়েছে। আগে হয়তো একটা রিদমে বল করতাম; এখন মিক্সড করে বোলিং করতে পারছি। এ ছাড়া বোলিংয়ে বেশ টার্নও পাচ্ছি। বলে ভেরিয়েশন ইচ্ছামতো দিতে পারছি। সত্যি কথা বলতে কি, আসলে সাইড অনের কারণেই সুযোগটা বেশি পাচ্ছি। এত টার্নও পেতাম না। এখন এই সাইড অনের কারণেই টার্নও বেশি পাচ্ছি।’
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ০২:৫৮ অপরাহ্ন, ১৮ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার ০২ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur