Home / জাতীয় / বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি কতোটা কার্যকর
করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি

বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি কতোটা কার্যকর

সীমিত আকারে হলেও করোনার চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি শুরু হতে যাচ্ছে৷ কেউ কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠলে তার রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত রোগীর দেহে প্রবেশ করিয়ে এই চিকিৎসা করা হয়৷

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হলে তার রক্তে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়৷ তা থাকে রক্তের হলুদাভ জলীয় অংশে৷ এটাই প্লাজমা৷ সুস্থ হওয়া রোগীর রক্ত থেকে এই প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দিলে তার করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে এবং সুস্থ হয়ে ওঠেন৷

করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সুস্থ হয়েছেন এরিমধ্যে তাদের কাছ থেকে প্লাজমা নেয়া শুরু হয়েছে৷ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে দুইজন করোনাজয়ী চিকিৎসক প্লাজমা দিয়েছেন৷ তারা হলেন ডা. দিলদার হোসেন ও ডা. রওনক জামিল পিয়াস৷ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. দিলদার হোসেন গত মাসে করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন৷ এর পর তিনি বাসায় কোয়ারান্টিনে থেকেই চিকিৎসা নেন৷ এখন পুরোপুরি সুস্থ৷ তিন বলেন, ‘‘আমি নিজে একজন চিকিৎসক এবং প্লাজমা থেরাপির ব্যাপারে আমার ধারণা আছে৷ তাই আমি মনে করেছি আমরা রক্তের প্লাজমা নিয়ে যদি অন্য রোগীর জীবন বাঁচে তাহলে কিছু হলেও তো মানুষের কাজে লাগতে পারব৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন নিয়মিত রক্তদাতা৷ এ পর্যন্ত ২৫ বারের মত রক্ত দিয়েছি৷ এটা রক্তদানের চেয়েও সহজ৷ ৩০-৩৫ মিনিট লেগেছে আমার৷ যারা করোনা পজিটিভ হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন তারা যদি প্লাজমা দেয়ার ব্যাপারে এগিয়ে আসেন তাহলে অনেকের জীবন বাঁচবে৷’’

প্লাজমা থেরাপির উদ্যোক্তাদের একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ও কোভিড-১৯ ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এটা এখন স্টাডি (পরীক্ষা) আকারে শুরু করেছি৷ আজ (শনিবার) দুইজনের কাছ থেকে মোট ৯০০ এমএল প্লাজমা সংগ্রহ করেছি৷ আরো সংগ্রহ করব৷ এটা আমাদের এখানে সংরক্ষণ করবো৷ একজন রোগীর প্রয়োজন হয় ২০০ এমএল প্লাজমা৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে৷ সেটা শেষ হলেই প্লাজমা রোগীকে দেয়া হবে৷ আমরা ভর্তি রোগীদের এটা দেব৷’’

চিকিৎসকদের দাবি চীনসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে ৮০ ভাগ সফলতা পাওয়া গেছে৷ মহিউদ্দিন আহমেদ এর কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, চীনে এর কিছু ছোট ছোট পরীক্ষা হয়েছে৷ এরমধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে ১০ জন রোগীকে প্লাজমা থেরাপি দেয়ার পর ১০ জনই ভালো হয়ে যায়৷ আর একটি কন্ট্রোলড গ্রুপে ১০ জনের মধ্যে ৭ জন ভালো হয়ে যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলে রক্তে প্রাকৃতিক নিয়মেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়৷ প্লাজমার মাধ্যমে অ্যান্টিবডি যখন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেয়া হবে তখন ওই ব্যক্তির শরীরের করোনা ভাইরাস ছাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে নিস্ক্রিয় করে ফেলবে৷’’ বাংলাদেশেও একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই প্লাজমা থেরাপি সফল হয়েছে বলে জানান তিনি৷

রক্তে কী পরিমান অ্যান্টিবডি হয় তা পরীক্ষার জন্য কিটও আনা হয়েছে৷ আনা হয়েছে প্লাজমা নেয়ার যন্ত্র৷ এই যন্ত্র রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা করে বাকিটা আবার দেহে ফিরিয়ে দেয়৷ একটি কিট দিয়ে ৯০ জনের প্লাজমার অ্যান্টিবডি টেস্ট করা যায়৷ তবে এই কিট বেশ দামী হওয়ায় ৩০-৪০ জনের প্লাজমা জমা হলে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হবে, জানান মহিউদ্দিন আহমেদ৷ (ডিডব্লিউ)

বার্তা কক্ষ, ২৯ মে ২০২০