করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে কারাগার সংরক্ষিত রাখতে দেশের ৩ হাজার কারাবন্দিকে জামিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনায় সৃষ্ট দুর্যোগের কারণে কারাবন্দির সংখ্যা কমাতেই দেশের ৬৮ কারাগারে ছোটখাটো অপরাধ ও জামিনযোগ্য ধারায় বিচারাধীন ৩ হাজারের বেশি কারাবন্দিকে জামিন দিতেই এ উদ্যোগ বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।
বর্তমানে দেশের সব কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪১ হাজার ৩১৪ জন। এর বিপরীতে বর্তমানে ৮৯ হাজারের বেশি বন্দি আটক রয়েছেন। কয়েকদিন পূর্বে যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অপরাধের কারণে এসব বন্দি আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় মাসের পর মাস কারা প্রকোষ্ঠে দিন কাটাচ্ছেন। অধিক বন্দির কারণে সরকারের বিশেষ নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ কারা অধিদফতরের এসব বন্দির তালিকা তৈরি করে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ হাজতিদের এ তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে এসব হাজতিকে ছেড়ে দেয়া হবে। কারাগার নিরাপদ রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ কর্নেল আবরার হোসেন জানান, মন্ত্রণালয়ের আদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
জামিনযোগ্য ছোটখাটো অপরাধে যারা কারাগারে আছেন, এ রকম তিন হাজারের সামান্য বেশি হাজতির নাম প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে ওই প্রস্তাব যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আপত্তি না থাকলে পাঠানো হবে আদালতে।
তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বিচারকই সিদ্ধান্ত নেবেন জামিন দেয়া যায় কিনা। মুক্তির বিষয়টি বিচারকদের হাতে, আমাদের হাতে নয়।
কারা সূত্র জানায়, জামিনের উদ্যোগ নেয়া এমন বন্দির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ১০০ এর মতো। তবে একইসঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত যার বেশিরভাগ অংশ তথা যেসব বন্দির কমপক্ষে ২০ বছর কারাবাস অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু কারাভ্যন্তরে থাকাবস্থায় কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করেননি এমন বন্দি ও জেলকোড অনুযায়ী সরকারের কাছে আবেদন করে রাষ্ট্রের ক্ষমা পেতে পারেন কারা কর্তৃপক্ষ এমন বন্দিদের তালিকাও তৈরি করছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, করোনার এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মোট ৪০ বন্দিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের গৃহীত পদক্ষেপের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতের কারা অধিদফতরের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলা হয়, সর্বশেষ ২৮ মার্চের তথ্য অনুযায়ী দেশের কারাগারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোনো পজিটিভ কেস নেই। তবে অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে যদি কারো ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে তাদেরকে পৃথক কক্ষে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন কারাগারে মোট ৪০ বন্দিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। দেশের কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, করোনা আক্রান্তদের কোনো পজিটিভ কেস পাওয়া গেলে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্দিদের জন্য বিভাগভিত্তিক কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, সিলেট, ফেনী ও দিনাজপুর জেলা কারাগারে আইসোলেশন সেন্টার গঠন করা হয়েছে। করোনার সম্ভাব্য সংক্রমণ এড়াতে কারাগারে বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ সীমিত করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, বন্দিরা যেন আত্মীয়-পরিজন নিয়ে উদ্বিগ্ন না হন সেজন্য জরুরি টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বন্দি ও স্টাফদের বিদেশ ফেরত আত্মীয়-স্বজনকে কারা এলাকায় প্রবেশ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কারা এলাকায় প্রবেশকারী সকলকে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম কানুন মেনে চলতে বাধ্য করা হয়েছে। হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিউটিতে প্রবেশের আগে কর্মরত সকলের হাত ও বুট জুতা জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে রোগটিতে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে।
বুধবার দুপুরে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সরাসরি অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ৫৪। দেশে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১ এপ্রিল ২০২০