বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইনে ভোটার করে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী মার্চেই প্রবাসীদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড বিতরণে যেতে চায় সংস্থাটি।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য, দুবাই, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীদের জন্য অনলাইনে পোর্টাল তৈরি করে ভোটার হওয়ার আবেদন নিচ্ছে ইসি।
জানা যায়, সবচেয়ে বেশি সাড়া পড়েছে দুবাই প্রবাসীদের মধ্যে। যুক্তরাজ্য প্রবাসীদেরও আগ্রহ বেশ। তবে মালয়েশিয়ায় তেমন সাড়া পড়েনি।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের অপারেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, দুবাই থেকে অন্তত ৪শ আবেদন এসেছে। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে অন্তত ৬০টি আবেদন।
যুক্তরাজ্য থেকে উদ্বোধনের পরপরই ৫০টির মতো আবেদন পড়েছে বলে জানা যায়। তবে আবেদনের সংখ্যা যেমনই হোক না কেন, আগামী মার্চেই প্রবাসীদেরর স্মার্টকার্ড বিতরণে যেতে চায় ইসি। এ মাসে শুরু করে পরবর্তীকালে কার্যক্রমটি ধারাবাহিক রাখার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে দেশটিতে বসবাসরত নাগরিকদের এই কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া দুবাই প্রবাসীদের মধ্যেও এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বাংলানিউজকে বলেন, মার্চে সীমিত আকারে স্মার্টকার্ড বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এটা নির্ভর করবে আবেদনকারীদের আবেদনগুলো কতটা ঠিক আছে তার ওপর। কারণ তাদের আবেদনগুলো নিজের এলাকা থেকে বাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ে আবেদনের সঠিকতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট দশ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিয়ে স্মার্টকার্ড সংশ্লিষ্ট হাইকমিশন, দূতাবাস থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চে সীমিত আকারে বিতরণে যেতে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাও একমত পোষণ করছেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর দুবাই প্রবাসীদের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এরই মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের দ্বার উন্মোচিত করে সংস্থাটি। পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অন্য দেশে কার্যক্রমটি শুরু হবে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এই তিনটি দেশের মধ্যে দুবাই ও যুক্তরাজ্য থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আর মালয়েশিয়ায় কম সাড়া পড়ছে।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম মালয়েশিয়ার কার্যক্রমটি সমন্বয় করছেন। তিনি বলেন, হয়তো এখানকার প্রবাসীরা একটু শ্রমিক শ্রেণির বেশি। যাদের পড়ালেখাও তেমন নেই। যে কারণে আবেদন কম আসছে। এছাড়া কিছু আইনি ঝামেলার কারণে অনেকে হয়তো সেভাবে সাড়া দিচ্ছেন না। তবে ধীরে ধীরে বাড়বে বলে আশাকরি।
জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম জানান, যুক্তরাজ্য, দুবাই, মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্যদি দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। পরে প্রাপ্ত তথ্যদি যাচাই-বাছাই করে প্রবাসেই বায়োমেট্রিক সংগ্রহসহ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
আবেদনের সঙ্গে যে সব দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে:
বৈধ পাসপোর্টের কপি,বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র,বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি,বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম-মোবাইল নম্বর-এনআইডি নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা,বাংলাদেশে কোথাও ভোটার হয়নি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র।
বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় কোটির মতো প্রবাসী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন।
বর্তমানে দেশে ভোটার রয়েছেন ১০ কোটি ৪২ লাখের মতো। চলমান হালনাগাদ কার্যক্রম শেষে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
বার্তা কক্ষ,১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০