চাঁদপুর শাহরাস্তিতে দাফনের দেড় বছর পর আজ বুধবার কবর থেকে তোলা হচ্ছে গৃহবধূ মেহজাবিন সুলতানা ইতির লাশ। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেনের নির্দেশে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা আক্তারের উপস্থিতিতে এ লাশ উত্তোলন করা হবে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, শাহরাস্তি পৌর শহরের ঘুঘুশাল গ্রামের আমির হোসেনের কণ্যা মেহজাবিন সুলতানা ইতির বিয়ে হয় পাশ্ববর্তি মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের মালরা গ্রামের আবদুল কুদ্দুছের মেঝ ছেলে একরামুল হক রাজুর (২৭) সাথে। গত ২৩ জুন ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যায় ইতি’র বিয়ের মাত্র ২ মাস ১৮ দিন সময়ের মধ্যে রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় পরদিন ২৪ জুন ২০১৮ তারিখ একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরবর্তীতে ২৮ জুন তারিখে নিহত ইতি’র ভাই নূরে আলম বাদী হয়ে ৪জনকে আসামী করে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশের তদন্ত রহস্যজনক মনে করে বাদী আপত্তি জানালে ৫ জুলাই ২০১৮ তারিখে চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) মামলাটি বদলি করা হয়।
গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শক এম এ রউফ খান মামলাটি তদন্ত করে হত্যার বিষয়টি মিথ্যা বলে ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন। ওই চুড়ান্ত প্রতিবেদনের (ফাইনাল রিপোর্ট) বিষয়ে আদালতে অনাস্থা জানিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ তারিখে মামলার বাদী আবেদন করেন।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পুনরায় তদন্তের জন্য ২৭ মে ২০১৯ তারিখ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) চাঁদপুরকে নির্দেশ প্রদান করেন। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আবদুল মান্নান সরকার পুনরায় মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।
মামলা তদন্তকালীন সময়ে ২৪ আগষ্ট ২০১৯ তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার মালরা গ্রাম থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামলার প্রধান আসামী ইতি’র স্বামী একরামুল হক রাজুকে শাহরাস্তি থানার সহযোগিতায় সিআইডি চাঁদপুর আটক করে আদালতে সোপর্দ করে।
ওই তদন্তকালীন সময়ে পুনরায় সিআইডি’র উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মান্নান সরকার থেকে মামলাটি বদলি করে ৩১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে একই দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) সাইফুল ইসলামকে দেয়া হয়। একের পর এক মামলাটি বিভিন্ন দপ্তরে বদলি হতে থাকায় বাদী পরিবার নিরাশ হয়ে পড়ে। ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়ে নিহত গৃহবধু ইতি’র পরিবার দিশেহারা হয়ে সুষ্ঠু ও সঠিক বিচারের প্রত্যাশায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের স্বরণাপন্ন হন। ইতি’র পরিবার ন্যায় বিচারের আশায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর একটি আবেদন করেন।
সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে ১৪ নভেম্বর সিআইডি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোঃ আবদুল মান্নানকে তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ কুতুব উদ্দিনের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ২৪ নভেম্বর ইতির স্বামী ইকরামুল হক রাজুর রিমান্ড মঞ্জুর ও কবর হতে লাশ উত্তোলনপূর্বক পুনঃময়না তদন্তের জন্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন।
আদালত জেলগেটে ৫ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে জিজ্ঞাসাবাদে রাজু ইতি হত্যার সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে। পরবর্তীতে চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আযমের আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
জবানবন্দিতে আসামী একরামুল হক রাজু জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি বাড়িতে এসে ইতির সাথে কথা বলি। কথা বলার এক পর্যায়ে আমার সাথে তার বাক্বিত-া হয়। আমি রাগের বশবর্তী হয়ে তার গলায় চাপ দিলে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দিশেহারা হয়ে কোনো উপায় না দেখে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের (ইতির) বাড়িতে চলে যাই। সেখানে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বলি ইতি অসুস্থ, আপনারা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে আমি রাগের বশে তার গলা চেপে ধরি। আমি বুঝতে পারিনি সে মরে যাবে।
পরবর্তীতে গত ১৬ জানুয়ারি চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেন মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্যে কবর হতে নিহত ইতির লাশ উত্তোলন করে পুনঃময়না তদন্তের নির্দেশ দেন।
স্টাফ করেসপন্ডেট