জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য রাজধানীর সদরঘাটে একটি অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৮৪ হাজার বর্গফুট এলাকায় ৬ তলা বিশিষ্ট এই আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় আটশ’ থেকে এক হাজার মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা ও সহযোগিতা নিচ্ছেন। এরইমধ্যে কেন্দ্রটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে- এই সেবাকেন্দ্রটি থেকে নারী ও শিশুসহ সবার জন্য জরুরি চিকিৎস্যা সেবা, অসহায় মানুষের জন্য বৃদ্ধাশ্রম, পথবাসী নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও শিক্ষা কেন্দ্র, কম্পিউটার ল্যাব, মনোসামাজিক কাউন্সিলিং কেন্দ্র, শিশুদের জন্য প্রারম্ভিক বিকাশ কার্যক্রম (ইসিডি) ও দিবাযত্ন কেন্দ্র, শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক শিক্ষা সেশন রয়েছে।
এছাড়া শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য, বিনোদনের ব্যবস্থা এবং পথবাসী নারীদের জন্য আবাসন সুবিধাসহ জীবিকা উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি ভবনসংলগ্ন রয়েছে একটি উন্নতমানের প্রতিবন্ধীবান্ধব সেবাকেন্দ্র; একটি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিতকরণে রয়েছে একটি মাতৃদুগ্ধপান কেন্দ্র। এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রয়েছে কমিউনিটি ভিত্তিক মনোসামাজিক সহায়তা প্রদানের সুব্যবস্থা।
সিটি করপোরেশন আরও বলছে- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দারিদ্র্যের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে অসংখ্য মানুষ শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। শহরেও আছে অগণিত দরিদ্র আর উদ্বাস্ত মানুষ। মহাপ্রান্তিক এসব মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ লোক পথ বা ঝুপড়িবাসী, যারা খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থায় জীবন যাপন করেন।
এরমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার লোক বসবাস অনুপযোগী বস্তিতে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন প্রবীণ, প্রতিবন্ধী, শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি।
বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে ২০১৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মাধ্যে নগরে জনগণের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৮ কোটি। এখনই উদ্যোগ না নিলে এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ থাকবে উদ্বাস্তু। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শুমারি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ। যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারই বস্তি, ঝুপড়ি অথবা রাস্তায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিশেষত পথবাসী মানুষের বিপন্নতার কথা চিন্তা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় সাজেদা ফাউন্ডেশন, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়াটার এইডের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে মানিকনগরে একটি পথবাসী সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।
যার জন্য ভূমি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই কেন্দ্র হতে প্রতিদিন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকা উন্নয়ন, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সদরঘাটে প্রায় ৮৪ হাজার বর্গফুট এলাকায় ৬ তলা বিশিষ্ট একটি জলবায়ু উদ্বাস্তু সেন্টার নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে।
যেসব সেবা পাওয়া যাচ্ছে সদরঘাটের আশ্রয় কেন্দ্রে:
ছয় তলা বিশিষ্ট ভবনটির নিচতলায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক, গাইনি, শিশু, মেডিসিন, চর্ম ও দন্ত সেবা প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় তলার বাম পাশে রয়েছে ৭৫ জন বয়স্কর জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং ডান পাশের কক্ষগুলোর মধ্যে একটি প্রশিক্ষণ, একটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি মনোসামাজিক কাউন্সিলিং কেন্দ্র। এর একটি কক্ষে রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়।
সদরঘাটে আশ্রয়কেন্দ্র ভবনের তৃতীয় তলার বাম পাশে রয়েছে দুই থেকে ছয় বছর বয়সী ৮৫ জন শিশুর জন্য প্রারম্ভিক বিকাশ কার্যক্রম (ইসিডি) ও দিবাযত্ন কেন্দ্র। এছাড়াও ৭ থেকে ১০ বছরের শিশুদের শিক্ষাসহ সব শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। ডান পাশে ৮৫ জন স্কুলপড়ুয়া শিশুর জন্য শিক্ষা, শারীরিক বা মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক শিক্ষা সেশন রয়েছে।
আর চতুর্থ তলায় ও পঞ্চমতলায় ৪৫২ জনের জন্য আবাসন সুবিধাসহ জীবিকা উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে। ভবনসংলগ্ন একটি উন্নতমানের প্রতিবন্ধীবান্ধব সেবাকেন্দ্র এবং পাবলিক টয়লেট এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিতকরণে রয়েছে একটি মাতৃদুগ্ধপান কেন্দ্র। এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রয়েছে কমিউনিটি ভিত্তিক মনোসামাজিক সহায়তা প্রদানের সুব্যবস্থা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে কেন্দ্রটি ঘুরে দেখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এসময় তিনি সেখানকার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরবর্তীতে যিনি নগরের দায়িত্বে আসবেন, তিনি অসহায় মানুষের স্বার্থে সদরঘাটে আশ্রয়কেন্দ্র এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাঈদ খোকন।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ২৯ জানুয়ারি ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur