Home / সারাদেশ / অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলে দেয়া ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ
bohiskar-inner-

অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলে দেয়া ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে পুকুরের পানিতে ফেলে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় চার শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল হচ্ছে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করাসহ ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধেই নেওয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। দোষীসাব্যস্ত এই ১৬ জনই রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

সিদ্ধানুযায়ী, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদ আগামী তিনবছর পর্যন্ত স্থগিত করে রাখা এবং সাত শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইনস্টিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য ইনস্টিটিউটে রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের টর্চারসেল হিসেবে পরিচিত ইনস্টিটিউটের ১১১৯ নম্বর কক্ষটি ভেঙে ফেলে সেখানে কমনরুম বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত কার্যকরের জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে চিঠি দিয়েছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।

ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা শিক্ষার্থীরা হলেন- অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার মূল হোতা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্রো মেডিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-২০১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-২০১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।

এ ঘটনায় সরাসরি জড়িতের প্রমাণ মেলায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদসহ অন্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য স্থগিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন- ইনস্টিটিউটের ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ছাত্র কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।

এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন- ২০১৫-২০১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ৬ষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-২০১৭ সেশনের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ৭ম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডু, মেকাট্রনিক্স ৭ম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের মেহেদি হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের ৩য় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার ৩য় পর্বের মাসুদ রানা মীম।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওই সভায় দোষীসাব্যস্ত হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলাটি প্রথমে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তদন্ত করছিল। পরে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার মূল হোতা সৌরভসহ এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। নাম উল্লেখ না থাকা আরও ১৩ অজ্ঞাত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। এছাড়া অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলেও জানান মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।

এর আগে গত ২ নভেম্বর দুপুরে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা সৌরভকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করা হয়। ক্যাম্পাস মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ ও তার অনুসারীরা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে। তারা অধ্যক্ষকে টেনে-হেঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের পুকুরে ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ রাতে ছাত্রলীগের সাত নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ৫০ জন অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর নামে মামলা করেন। ঘটনার পর ছাত্রলীগের পলিটেনিক শাখা ইউনিটের কমিটি বাতিলসহ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ছাত্রলীগ ও ইনস্টিটিউট থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয় অভিযুক্তদের। এছাড়া আলাদাভাবে গঠিত হয় দু’টি তদন্ত কমিটি। পরে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর থেকে করা আলাদা তদন্ত কমিটির সদস্যরাও সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান।