শিশুর জন্মের পর মারাত্মক ১০টি রোগ থেকে রক্ষার জন্য সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে অবিস্মরণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যাপক সফলতার জন্য এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননা পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন-জিএভিআই।
২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত রাখায় পুরস্কারটি পেয়েছেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জিএভিআই’র বোর্ড চেয়ার ড.গোজি ওকোনজো-ইউয়িয়ালার কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার আগে প্রসংশাপত্রে ওকোনজো-ইউয়িয়ালার বলেন, ‘এ পুরস্কার তাদের জন্য, যারা শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য জরুরি টিকাদানে উদ্যোগী হয়েছেন এবং কোনও শিশু যাতে বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন। শুধু টিকাদান কর্মসূচি নয়,শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নও শেখ হাসিনা একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ১৯৮৫ সালের জরিপে দেখা যায়,১ বছরের কম বয়সী শিশুদের পূর্ণ টিকা প্রাপ্তির হার মাত্র ২ শতাংশ। সে সময় শুধুমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বড় বড় হাসপাতালে টিকা দেয়া হতো। পরবর্তী ৫ বছরে কর্মসূচির ব্যাপক সম্প্রসারণ ও নিবিড় টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।
১৯৯০ সালের মধ্যে ৬০ % ভাগ শিশু টিকা পায়। এরপর সময়মত সব টিকা গ্রহণ না করার কারণগুলো দূর করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সিডিসি, সিভিপি বা পাথ এবং ইউএসএআইডি সম্মিলিতভাবে কিছু উদ্যোগ নেয়-যা রেড স্ট্র্যাটেজি নামে পরিচিত।
২০০৩ সালে সরকার হেপাটাইটিস বি এর টিকা কর্মসূচিতে যুক্ত করে এবং এডি সিরিঞ্জ প্রবর্তন করে। ২০০৯ সালে সারাদেশে হিব পেন্টাভ্যালেন্ট এবং ২০১২ সাল থেকে ৯ মাস বয়সে দেওয়া হামের টিকার পরিবর্তে হাম রুবেলা টিকা এবং ১৫ মাস বয়সে এমআর ২য় ডোজ টিকা সংযোজন করা হয়। ২০১৫ সালে নিউউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন এবং আইপিভি টিকা সংযোজন করা হয়। এছাড়াও ২০১৭ সাল থেকে সারাদেশে ফ্রাকশনাল আইপিভি টিকা সংযোজন করা হয়।
২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, ১ বছরের মধ্যে পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত শিশুর হার ছিল ৮২.৩ % । যদিও বিসিজি টিকাদানের হার ছিল ৯৯.৩ % ।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ধনুষ্টংকার, ডিফথেরিয়া, হুপিংকাশি, যক্ষ্মা, পোলিও, হাম, রুবেলা, হিমোফাইলাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, হেপাটাইটিস বি ও নিউমোনিয়া শিশুদের ১০টি মারাত্মক রোগের টিকা দেয়া হচ্ছে।
বাসাবো স্যাটেলাইট ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিলরুবা খাতুন বলেন,‘শিশুদের এ টিকাগুলোর মধ্যে জন্মের পরপরই দিতে হয় যক্ষ্মার বিসিজি টিকা। এরপর ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ ও ১৮ সপ্তাহে দিতে হয় বাকি ডোজ। ৯ মাস পূর্ণ হলে হাম ও রুবেলার প্রথম ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ১৫ মাস পূর্ণ হওয়ার পর।
জন্ম থেকে ১৫ মাস পর্যন্ত সময়ে শিশুকে কমপক্ষে মোট পাঁচবার টিকা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। আমাদের এখানে আমরা শিশুদের জন্য একটি টিকা কার্ড করে দেই। শিশুর এ কার্ডটি সারাজীবন সংরক্ষণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করি।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদ বলেন,‘ আমাদের দেশে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক ইপিআই কর্মসূচি দেখে বলেন ‘আমরা যেভাবে ইপিআই কর্মসূচি করেছি সেটা অন্য দেশের জন্য রোল মডেল।’ এখনও পৃথিবীর যেকোনও দেশে আলোচনা যখন হয় তখন বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি আসে। কারণ শুধু টিকা প্রদানে সাফল্য অর্জন করা নয়, এটিকে ধরে রাখাও বটে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এজন্য অন্যান্য দেশে যখন বিশেষ কর্মসূচি নেয়া হয় তখন আমাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন,‘আমরা ২০১৪ সালে পোলিও মুক্ত করেছি। মা ও শিশুর ধনুষ্টংকার রোধ করেছি। শিশুর জন্মগত রুবেলা প্রতিরোধে আমাদের সাফল্য খুবই ভালো।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রেগ্রাম ম্যানেজার মওলা বখশ চৌধুরী জানান,‘দেশের সব শিশুর টিকা ডিজিটালি রেকর্ড করার কার্যক্রম শুরু হবে শিগগিরই এবং এটি হলে আর কোনো শিশুই টিকার বাইরে থাকতে পারবেনা।’ বাসস
বার্তা কক্ষ, ২৯ নভেম্বর , ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur