ফরিদগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘেরের পাড় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় গ্রামীণ সড়কগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ফরিদগঞ্জ বাজার মিরপুর সড়কটিও।
মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীরা সরকারি রাস্তাগুলো ঘেরের বেড়ি হিসেবে ব্যবহার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না । ঘেরের ক্ষেত্রে রাস্তার পাশে আলাদা বেড়ি করার নিয়ম থাকলেও তা কেউই মানছে না । এদিকে সরকারি রাস্তার পাশে মাছের ঘেরের বেড়ি হিসেবে ব্যবহার ও সরকারি খালের পানি নিস্কাশন পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছের ঘের করায় উপজেলায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এতে একদিকে বিল -জলাশয়গুলোতে আবাদকৃত আউশ, আমন আবাদ বিঘিœত হচ্ছে। অপরদিকে হাজার হাজার হতদরিদ্র পরিবার বিলে মাছ শিকার করতে পারছে না।
ঘেরের বেড়ি হিসেবে সরকারি রাস্তা ব্যবহার করায় উপজেলার প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ পাকা ও ইটের সড়কগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফরিদগঞ্জ মিরপুর সড়ক, ফরিদগঞ্জ – রুপসা সড়ক, ভূলাচৌ -একতা বাজার সড়ক, গল্লাক –আষ্টা বাজার সড়ক, টুবগী -লোহাগড় , কামতা -সেন্দ্রাসড়কসহ প্রায় অন্তত ৫০ টি সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সড়কে যান চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এলাকার মানুষকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২’শ টি রাস্তার দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১’শ কি. মি.। এর মধ্যে পাকা রয়েছে ৪’শ কি. মি. ও কাঁচা সাড়ে ৭’শ কি. মি.। জেলের সংখ্যা ১,৫৬২ জন ও মাছ চাষীর সংখ্যা ১০,২৬২ জন। পুকুর ১০,৬৬৫ টি ,আয়তন ১,৭১৯.৫৬ হেক্টর, সরকারি রয়েছে ৪৫ টি, আয়তন ১৮.৭৫ হেক্টর। খাল রয়েছে ১৩ টি, আয়তন ৩৮৫ হেক্টও ও মৎস হ্যাচারী ৪ টি।
বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মিজি বলেন, ‘সরকারি রাস্তার পাশে মাছের ঘের করার সময় রাস্তা থেকে ৫ হাত আইল অথবা বাঁধ নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু কেউ তা না মেনে সরকারি পাকা- কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করে মাছের চাষ করছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সড়কগুলো। স্থানীয় মেম্বাররা মৌখিকভাবে বললেও আইন -কানুন মানছে না মৎস্য চাষীরা ।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহফুজুল হক বলেন,‘মাছের ঘেরের কারণে পৌরসভা ও ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। পাশাপাশি এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বারবার উপস্থাপন করেও কোনো ফল আসে নাই। আমাদের শতভাগ উদ্যেগ থাকলেও একটি মহলের কারণে তা হচ্ছে না। মৎস্য ও প্রকৌশল অফিস থেকে ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ড.জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘প্রতি বছর এলজিইডি থেকে লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয় করে সড়ক উন্নয়ন করে থাকি। কিন্তু পাকা সড়কগুলোকে মাছ চাষীরা পুকুরের পাড় ও জলাশয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। পাকা রাস্তাগুলো পুকুর ও জলাশয়ের কারণে প্রতি বছর ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি রাস্তা পুকুরের পাড় হিসেবে ব্যবহার করার কোনো বিধান নেই । যার পুকুর সে নিজ খরচে তা সংরক্ষণ করবে।
রাস্তা থেকে ৮ থেকে ১০ ফুট দূরে পুকুর ও জলাশয় থাকার কথা। কিন্তু এটা না রেখে সরকারি রাস্তাকে বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করছে মৎস ব্যবসায়ীরা।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘মাছ চাষীরা সরকারি রাস্তার পাশে বাঁধ নির্মাণ না করে, কোনোভাবেই যেন মাছ চাষ না কওে এ বিষয়ে আমি উপজেলার প্রসাশনিক মিটিংয়ে উপস্থাপন করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। স্থানীয় সাংসদ মহোদয়,উপজেলা চেয়ারম্যান,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একাধিকবার অবহিত করেও কোনো সুফল পাইনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো.শওকত আলী বলেন,‘ মাছ চাষের কারণে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। অধিদপ্তর থেকে আমাদের কোনো নিদের্শনাও নেই।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মমতা আফরিন বলেন,‘ যে সব এলাকায় সড়কের পাশে মাছের ঘের ও খালে বাঁধ আছে সেগুলোর তালিকা করা হবে। যারা সড়কের পাশে আলাদা পাড় না দিয়ে ঘের তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মো.শিমুল হাছান
৩১ আগস্ট ২০১৯