জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম জানাজা ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রোববার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা আহসান হাবীব জানাজা পড়ান।
জানাজায় অংশ নেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, দলটির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এরশাদের ভাই জি এম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেসব কাজ করেছেন তা সবার কাছে পছন্দনীয় নাও হতে পারে। তাই তার কাজে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দিবেন। তার কাছে যদি কারও কোনো দেনা-পাওনা থাকে তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আর সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’
এর আগে সকাল পৌনে ৮টার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এরশাদ।
৯০ বছর বয়সী এরশাদ রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২২ জুন সিএমএইচে ভর্তি করা হয় তাকে। এর আগেও তিনি একাধিকবার দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেন।
জানাজায় অংশ নেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, দলটির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রংপুর-৩ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় (রংপুর জেলার দিনহাটা) জন্মগ্রহণ করেন। এরশাদ বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান, এককালীন প্রধান সামরিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৮১ সালে ৩০ মে, জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ পায়। ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন শুরু করেন। ওইদিন তিনি দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ এফ এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন।
এরশাদ দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
এদিকে জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দাফন নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। রোববার দুপুরে রাজধানীর বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনাও দেখা দেয়।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বনানী সামরিক কবরস্থানে কেন তাকে দাফন করা হবে? তারা বলছেন, ওখানে এরশাদকে দাফন করার মধ্যে দিয়ে জাতীয় পার্টিকেও দাফন করা হবে।
জাতীয় পার্টির কর্মী আজহার বলেন, ‘স্যারকে ওখানে কেন দাফন করা হবে? উনাকে ওখানে দাফন করার চেয়ে রংপুরে দাফন করা ভালো। প্রয়োজনে আমরা ৫০০ টাকা করে তুলে উনার দাফনের জন্য জায়গা কিনে দেব। বনানী কবরস্থানে উনাকে দাফন করা যেতে পারে।’
জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হাসান বলেন, ঢাকার যে কোনো উন্মুক্ত স্থানে সুন্দর পরিবেশে দাফন করতে হবে। এটাই আমাদের দাবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দাফনের জায়গা পরিবর্তন হতে পারে।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান বলেন, পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন।